নিজস্ব প্রতিনিধি: ৯৮ সাল থেকে বেলপাহাড়িতে মাও সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন মদন- জবা। একসময় কিষাণজির বিশ্বস্ত ক্যাডার ছিলেন এই মাও দম্পতি। ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর বুড়িশোলের জঙ্গলে মাও শীর্ষ নেতার মৃত্যু হওয়ার পর থেকেই বেপাত্তা এই দম্পতি। ধরা পড়েছিলেন, আত্মসমর্পণ করেছিলেন অনেক মাওবাদী (Maoist)। আত্মসমর্পণের পর তাঁদের চাকরিও মিলেছিল সরকারি প্যাকেজে। তবুও কোনও ভাবেই নাগাল পাওয়া যায়নি এই মাও দম্পতির। এর বেশ কয়েক বছর খবর পাওয়া গিয়েছিল, মদন অসুস্থ। তার এত বছর পর ফের সক্রিয় হয়ে উঠছেন তাঁরা। সূত্রের খবর অন্তত এমনটাই।
২০১১ সালে কিষাণজির মৃত্যুর পর রাজ্যে কার্যত ‘শূণ্য’ হয়ে গিয়েছিল মাও সংগঠন। ঝাড়খণ্ডে অবশ্য মাও প্রভাব লক্ষ্য করা যেত ও যায়। এরপর ২০২১ সালে ঝাড়খণ্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়েন মাও নেতা কিষাণ দা। তারপর ওই বছরের ২০ নভেম্বর ভারত বনধের ডাক দেয় মাও সংগঠন। তাতে মিশ্র প্রভাব পড়েছিল। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডে উপড়ে দেওয়া হয়েছিল রেললাইন। তারপর ফের ৮ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধ ডাকে মাওবাদীরা। এবারেও প্রভাব ছিল মিশ্র। বনধের আগের দিন পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার ভিন্ন দুই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল পোস্টার ও ল্যান্ডমাইন। এরপর ২১ এপ্রিল ফের সাদা কাগজে লাল কালিতে হাতে লেখা পোস্টার পড়ল গড়বেতা থানার গনগনিতে। তাতে পাট্টার দাবি জানানো হয়েছে। লেখা রয়েছে, ‘ ফরেস্ট ল্যান্ড ভূমিহীন আদিবাসীদের অবিলম্বে পাট্টার ব্যবস্থা করতে হবে’। নিচে লেখা সিপিআই- মাওবাদী। আর পোস্টারের শুরুতে লেখা ‘মাওবাদী জিন্দাবাদ’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার এই প্রসঙ্গে বলেন, কড়া নজরদারি রয়েছে। নিয়মিত চলছে অভিযান। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
এদিকে বিশেষ সূত্রে খবর, মাও নেতৃত্বে ফের সক্রিয় মদন- জবা। মাও জোনাল কমান্ডার দম্পতির সঙ্গে রয়েছেন অন্যতম মাও নেতা শচীন ও শংকর। থাকছেন রাজ্য কমিটির নেতা সব্যসাচীও। খবর, ঝাড়খণ্ড সীমান্তে যাতায়াত বাড়ছে তাঁদের। এতেই বিশেষ সতর্ক পুলিশ (Police)- প্রশাসন। চলছে নিয়মিত নাকা তল্লাশি। তবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক প্রয়াত কর্তা বলেছিলেন, মাওবাদীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন নেতৃত্বের নাম একই রাখে। এতে নির্দিষ্ট কাউকে চিহ্নিত করতে অসুবিধা হয়। যেমন- কিষাণ, মদন, সুচিত্রা। আসলে বাহিনী ও গোয়েন্দাকে ধোঁয়াশায় রাখার জন্য মাওবাদীদের এই প্রচেষ্টা।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র আগেই নির্দেশ দিয়েছে মাও বিরোধী কড়া অবস্থান নিতে। তৈরি করা হচ্ছে মাও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের তালিকা। তারপরেই ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে রাজ্যকে সতর্ক করা হয়েছিল। মাও ইস্যুতে জারি করা হয়েছিল ১৫ দিনের হাই অ্যালার্ট। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ছক কষা হচ্ছে জঙ্গলমহলের যে কোনও থানায় হামলা চালানোর। তাই কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়েছে জঙ্গলমহলের জেলাগুলিকে। চলছে জোর কদমে তল্লাশি। এই পরিস্থিতিতেই ঝালদায় ১৮ এপ্রিল পড়েছিল মাও পোস্টার। তাতে ছিল কিষাণজির নাম। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। উপস্থিত ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা থেকে ওসি- আইসিরা। তারপরেই বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে নাকা তল্লাশি। সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার ৫ টি থানাকে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের সন্ধ্যে ৬ টার মধ্যে বাড়ি ঢুকে যেতে বলা হয়েছে। গত সোমবার মাও পোস্টার পড়েছিল ঝালদা পুরসভায়। আর তা ঘিরেই ছড়িয়ে পড়েছিল চাঞ্চল্য। একটি- দুটি নয়। উদ্ধার করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি পোস্টার। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘লাল সেলাম। মাড়োয়াড়ি চেয়ারম্যান চাই না। কিষাণজি অমর রহে’। সাদা কাগজে লালকালিতে হাতে লেখা সমস্ত পোস্টার। পুরসভা চত্ত্বরে ময়লা ফেলার গাড়িতে সাঁটানো ছিল সেই সমস্ত পোস্টার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছিল, রবিবার বেলগুমা পুলিশ লাইনে ডিজি থানার পুলিশদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, মাও পোস্টার পড়া নিয়ে সতর্ক থাকতে। আর তার ঠিক ১ দিন পরেই অলক্ষ্যে পড়ছিল পোস্টার। ফের ২১ এপ্রিল পড়ল পোস্টার পড়ল গড়বেতায়। যা নিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকা জুড়ে।