নিজস্ব প্রতিনিধি,বালুরঘাট: পুলিশ কুকুর নামিয়ে ঝোঁপ থেকে নিখোঁজ শিশুর দেহ উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য বালুরঘাটে। দু’দিন পর বিকৃত অবস্থায় কোলের শিশুকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অসহায় মা। খুনের জোড়ালো অভিযোগ তুলে সরব হলেন প্রতিবেশীরা। বুধবার সকালে এই ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বিজয়শ্রী এলাকায়। ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় পৌঁছে মৃত শিশুটির দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় বালুরঘাট থানার (Balurghat P.S.) পুলিশ। এদিকে শহর লাগোয়া এলাকায় এমন নৃশংসতার খবর পেয়েই এলাকায় ছুটে যান দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জেলা পুলিশ সুপার(SP) রাহুল দে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহম্মদ নাসিম ও ডিএসপি সোমনাথ ঝা সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট চারজনকে আটক করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে মৃত ওই শিশুর নাম আরমিনা খাতুন (২)। বাবা আইফুল মন্ডল শিশুর জন্মের আগেই মা সারবানু মন্ডলের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে। তারপর থেকে বাবার বাড়িতেই একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকতেন অসহায় সারবানু মন্ডল। বাবা না থাকায় জন্মের পর থেকেই সকলের কাছে আদুরে ছিল ছোট্ট আরমিনা। বাড়ির সামনেই রোজ খেলাধুলা করত সে। রোজকার মতো সোমবারও সেখানে খেলাধুলা করতে থাকবার সময় আচমকায় নিখোঁজ হয়ে যায় ছোট্ট শিশুটি। এদিকে জমিতে কাজ সেরে এসে একমাত্র মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় মা। ঘটনা জানাজানি হতেই ছোট্ট শিশুটিকে খুঁজতে হন্যে হয়ে মাঠে নামে প্রতিবেশীরাও। কিন্তু কোথাও শিশুর খোঁজ না পাওয়ায় অবশেষে বালুরঘাট থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন শিশুর মা সারবানু মন্ডল। সোমবার এনিয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই ঘটনার তদন্তে নেমে ওই এলাকার সমস্ত পুকুরে ডুবুরি নামায় বালুরঘাট থানার পুলিশ। কিন্তু এরপরেও হতাশ হতে হয়েছে পুলিশকে।
অবশেষে এদিন সাত সকালে পুলিশ কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় হাজির হন জেলা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। চলে পুলিশ কুকুরকে নিয়ে এলাকায় চিরুনী তল্লাশিও। যারপরেই পুকুরের পাশে থাকা একটি ঝোপের মধ্যে থেকে পচাগলা অবস্থায় উদ্ধার হয় বছর দুয়েকের ওই শিশুটি। যা দেখেই আঁতকে উঠেছেন প্রতিবেশীরা। এদিকে একমাত্র মেয়ের এমন মৃত্যুর খবর পেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অসহায় মা ও তার পরিবারের লোকেরা। ঘটনার খবর পেয়েই এলাকায় ছুটে যান জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহম্মদ নাসিম, ডিএসপি সোমনাথ ঝা সহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। তবে ছোট্ট ওই শিশুর মৃত্যু যে জলে ডুবে হয়নি তা কার্যত স্বীকার করেছেন প্রতিবেশীরা। তাদের অভিযোগ, যে এলাকা থেকে পুলিশ শিশুটির দেহ উদ্ধার করেছে সেখানে শিশুটির পৌঁছানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। খুন করেই সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৃত শিশুর মা সহ তার পরিবারের লোকেরা। এদিকে এই ঘটনার তদন্তে নেমেই ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাস শুরু করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান শ্বাসরোধ করেই শিশুটিকে মারা হয়েছে।