নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ১৩ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের দোমহানি গ্রামে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে গুয়াহাটিগামী বিকানের এক্সপ্রেস। সেই দুর্ঘটনায় মারা যান ৯জন যাত্রী। সেই ঘটনার কয়েকদিন পর থেকেই গ্রামবাসীরা দাবি করতে শুরু করেন যে, ওই ট্রেন দুর্ঘটনায় যারা মারা গিয়েছেন তাঁদের আত্মা নাকি সেখানে রয়ে গিয়েছে। শুধু রয়ে গিয়েছে তাই নয়, গ্রামবাশীদের দাবি, সেই সব আত্মা রাতের বেলায় লাইনের ধারে পড়ে থাকা ট্রেনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে। একই সঙ্গে গ্রামের ভিতরে ও দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা রেলের বিভিন্ন কামরার মধ্যে তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছে। এই আত্মাদের তাড়াতে গ্রামবাসীরা কীর্তনের দলও নামিয়েছিল। কিন্তু গোটা ঘটনাটি যে শুধুই গ্রামবাসীদের মনে গেঁথে থাকা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস ব্যতীত আর কিছুই নয় সেটাও তুলে ধরতে রাতের বেলা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কিছু সময় কাটালেন ময়নাগুড়ির বিডিও।
জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী ও তাঁর টিম। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁরা গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য ছিল, ‘আপনারা দিনে এসেছেন। ভূত আসে রাতে। দিনের বেলা কোনও সমস্যাই হয় না। ভূতের দেখাও পাবেন না। ভূতের উপদ্রব হয় রাতে। ভূতের আতঙ্কে গ্রামের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ গ্রামবাসীদের মুখে এহেন কথা শুনে বিডিও ঠিক করে নেন যে, নিজের টিম নিয়ে তিনি দুর্ঘটনাস্থলে বেশ কিছুটা সময় কাটাবেন রাতের বেলায়। সেই মতো গ্রামবাসীদের মন থেকে ভূতের আতঙ্ক কাটাতে দুর্ঘটনাস্থলে রাত জাগলেন ময়নাগুড়ির বিডিও শুভ্র নন্দী। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তারা দুর্ঘটনাস্থলের বিভিন্ন এলাকা টহল দিয়ে বেড়ান তাঁরা। কিন্তু হাজার টহল দিয়েও তাঁরা কোথাযও কোনও ভূতের দেখা পাননি। শুনতে পাননি কোনও অশরীরীর চিৎকার চেঁচামেচিও।
এরপরেই রবিবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে বিডিও জানান, ‘ভূত বলে কিছুই নেই। নিছক মানুষের একটি মনের ভুল। কেন গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। তবে মনে হচ্ছে, চোখের সামনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেখতে পেয়ে তাঁরা মানসিক ভাবে আতঙ্কিত রয়েছেন। সে কারণেই তাদের মনে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। ধীরে ধীরে তা কেটে যাবে। একজন গ্রামবাসী অসুস্থ রয়েছেন তার বাড়িতে মেডিকেল টিম পাঠানো হবে।’ বিডিও’র সুরে সুর মিলিয়ে ময়নাগুড়ি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ঝুলন সান্যাল বলেন, ‘এই ধরনের ভুতের কোন অস্তিত্ব নেই এখানে। এটা গ্রামবাসীদের ভ্রান্ত ধারনা।’ কিন্তু এত সবের পরেও গ্রামবাসীদের মন থেকে ভূতের আতঙ্ক কাটছে না।