নিজস্ব প্রতিনিধি: হাতেগোনা কয়েক মাস মাত্র। তারপরেই বেজে উঠবে লোকসভা নির্বাচনের(General Election 2024) দামামা। সেই ভোট যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সংসারে অশান্তির আগুন বেশি করে ছড়িয়ে পড়ছে। এবার বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন দলেরই দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির অনুগামীরা। বঙ্গ বিজেপির এই দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হলেন রাহুল সিনহা(Rahul Sinha) এবং দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)। কেননা সামনে এসেছে, মধ্য কলকাতার(Kolkata) মুরলী ধর সেন লেনে বিজেপির যে পুরাতন রাজ্য দফতর রয়েছে সেখানে ওই দুই নেতার জন্য রাখা দুটি ঘর ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েছে দলেরই ক্ষমতাসীন শিবির। তারই অঙ্গ হিসাবে দুটি ঘরেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে এসির সংযোগ। এই পদক্ষেপ দুই নেতাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বলেই মনে করছেন তাঁদের অনুগামীরা। আর তাই এই ক্ষোভ নিয়ে তাঁরা সরব হওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিনহার ঘর থেকে এসির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে তাঁরা সেখানে বসতেই না পারেন। অধিকাংশ রাজ্য নেতারাও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। দলের একাংশ চাইছে না লোকসভা নির্বাচনের আগে দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘর ভাঙা নিয়ে কোনও বিতর্ক হোক। অনেকেই এই ঘর ভাঙার পক্ষে নয়। ঘর ভাঙার চেষ্টা হলে, বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ করবে বলেও জানা গিয়েছে। যদিও তাতে সিদ্ধান্ত বদলাবে কিনা তা জানা যায়নি। এখনও সারা রাজ্যে দলের মধ্যে দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিনহার দাপট রয়েছে। জেলায় জেলায় দিলীপ আর রাহুলদের পক্ষে আছে বহু কর্মী। তাই রাজ্য দফতরে তাঁদের ঘর ভাঙলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে দলের মধ্যে বলেই মনে করছে বঙ্গ বিজেপির একাংশ। এম্নিতেই লোকসভা ভোটের আগে দলের সংগঠনের বেহাল অবস্থা ও কোন্দল ভাবাচ্ছে নেতাদের। তার ও এখন পর দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির ঘর রাজ্য অফিস থেকে তুলে দিলে পরিস্থিতি আরও বুমেরাং হতে পারে বলেই মনে করছে দলের একাংশ।
মুরলী ধর সেন লেনে বিজেপির রাজ্য অফিস বহু পুরনো। ১৯২৬ সালে জনসংঘ এই বাড়িতে একটি ঘর নিয়ে অফিস করে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বসতেন এই অফিসে। এখান থেকেই দল পরিচালনা করতেন। অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপির সব নেতারা এসেছেন, এই রাজ্য দফতরে। বৈঠকও করেছেন তাঁরা দলের নেতাদের সঙ্গে। তাই ৬ নং মুরলী ধর সেন লেনের এই অফিসের গুরুত্ব রয়েছে। বঙ্গ বিজেপির কর্মীদের কাছে আবেগ ও ভালবাসার জায়গা এই অফিস। যদিও এই রাজ্য অফিস থেকেই সমস্ত কাজকর্ম প্রায় গুটিয়ে নিয়েছে বর্তমান বঙ্গ বিজেপির শাসক শিবির। পুরনো অফিস নাকি পছন্দ নয় বিজেপি পর্যবেক্ষকদের। তাঁরা চান, সেন্ট্রাল এসি সমেত ঝাঁ চকচকে বিজেপির অফিস। তাই সল্টলেকে বিরাট অফিস হয়েছে।
সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘর ভাঙার নির্দেশও নাকি দিয়েছেন এই রাজ্যের দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। তাঁরা কলকাতায় এলে থাকেন যে কোনও পাঁচতারা হোটেলে। খুব বেশি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন না। বৈঠক করেন আর চলে যান। তাঁরা এখন চাইছেন, মুরলী ধর সেন লেনের রাজ্য অফিস থেকে সব তুলে দিয়ে সেখানে দলের আইটি সেলের অফিস বানাতে। এখন সল্টলেকের নতুন অফিসে দুটি তলায় আইটি সেল আছে। রাজ্য অফিসেও একটা বড় আইটি সেল আছে। আর তাই দলীয় কর্মীদের প্রশ্ন, ‘কী হবে এত আইটি সেল করে?’ কর্মীদের বিক্ষোভের ভয়ে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা রাজ্য অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁরা শুধু সল্টলেকে অফিসে যান। এখন দলীয় কর্মীরা প্রস্তুত নিচ্ছে, দিলীপ ঘোষ রাহুল সিনহাদের ঘর ভাঙার চেষ্টা হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে।