নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশ্যে ঘোষণা না করা হলেও গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ২০২৪’র নির্বাচনে(General Election 2024) দলের জয়ী অনেক সাংসদ ও মন্ত্রীকে ফের টিকিট না দেওয়াও হতে পারে। যে সব সাংসদকে আগামী নির্বাচনে বিজেপির তরফে টিকিট নাও দেওয়া হতে পারে তাঁদের মধ্যে বাংলারও বেশ কিছু সাংসদের নাম রয়েছে বলেই গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে নাকি বাঁকুড়া(Bankura) জেলার বিষ্ণুপুর(Bishnupur) লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সৌমিত্র খানের(BJP MP Soumitra Khan)। তিনি ২৪’র টিকিট পাবেন কী পাবেন না, সেটা ঠিক হওয়ার আগেই এক বড়সড় বিতর্ক বাঁধিয়ে বসে রইলেন সাংসদ নিজেই। প্রকাশ্যে রাজ্য পুলিশের আধিকারিককে ‘মা-বাপ’ তুলে হুমকি দিলেন তিনি। তাঁর এহেন হুমকির জেরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করে দিয়েছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এবার বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, দল তাঁর মন্তব্য অনুমোদন করে না। অর্থাৎ ঝেড়ে ফেলার কাজ শুরু হয়ে গেল। আর সেটা ২৪’র অনেক আগে থেকেই।
আরও পড়ুন বড় ধাক্কা DA আন্দোলনকারীদের, পিছিয়ে গেল সুপ্রিম শুনানি
সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার সোনামুখী ব্লকের মানিকবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে সংঘের কোষাধ্যক্ষ সহ ব্যাঙ্কের দুটি সিএসপির বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগকে সামনে রেখে সোমবার সকাল থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার প্রায় ২০০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েকশো মহিলারা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সরব হন সৌমিত্রও। সেই বিক্ষোভ থেকে সাংসদ দাবি করেন, এই মহিলারা যখন সোনামুখী থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন তখন থানা সেই অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। এরপরই বিজেপি সাংসদ বেলাগাম ও অশালীন ভাষায় সোনামুখী থানার আইসি(Sonamukhi PS IC)-কে হুমকি দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন তৃণমূলের সাংসদ পদ থেকে আচমকাই ইস্তফা লুইজিনহো ফ্যালেরিওর
সাংসদ সৌমিত্র খান বলেন, ‘আইসি অনেকদিন দাদাগিরি করছে আমি জানি। আইসি শুনে রাখ তোর বাপের ক্ষমতা নেই এখানে কিছু করার। তোর ঘরে মা বোন নেই আইসি? এখানের মা বোনেদের টাকা চুরি করবি? তারপর তোর কী ব্যবস্থা করা যায় তা দেখব। তোর বাড়িতেও ছেলেমেয়ে রয়েছে, যদি আমাদের এলাকার ক্ষতি হয় তাহলে তোরও হবে। শুনে রাখ তুই। যদি কিছু করতে আসিস তাহলে তোরও পরিবার রয়েছে, আমরা দেখে নেব। তোরা এই গ্রাম বাংলার মা-বোনদের হুমকি দিবি! তোর ঘরে মা-বোন নেই? তোরা নিজের ঘরের মা-বোনদের বিক্রি করিস বলে এখানেও মা-বোনদের টাকা চুরি করবি? লজ্জা করে না! মা-বোনেদের বলে রাখি আমার তরফ থেকে সাত দিন দেখব। তারপর সকলে মিলে লড়াই করে আপনাদের সমস্যার সুরাহা করব। এই আইসিকেও আমরা হাইকোর্টে ডেকে পাঠাব।’
আরও পড়ুন কুড়মি আন্দোলনে এখনই কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ নয়, কথা মমতা ও রেলমন্ত্রীর
সৌমিত্রের এহেন মন্তব্য যে দলের পক্ষে বিপদজনক হতে পারে তা দেখেই এখন সৌমিত্রের থেকে দূরত্ব তৈরির কৌশল নিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। সৌমিত্রর বক্তব্য সামনে আসতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে সব মহল। তৃণমূলের দাবি সাংসদের এই বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন প্রশাসনের মতো করে ব্যবস্থা নেবে। তৃণমূল(TMC) সাংসদ শান্তনু সেন এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ‘ওনার রাজনৈতিক অস্তিত্ব কী? তিনটি নির্বাচন লড়েছেন তিনটে রাজনৈতিক দলের প্রতীকে। আর তিনি যে দল করেন সেই দল এমনই সংস্কৃতীর ধারক-বাহক। ওনাদের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আশাই করা যায় না।’ ঘটনার জেরে দলের মুখ পুড়ছে দেখে একদিকে বঙ্গ বিজেপির তরফে যেমন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দল এই মন্তব্য অনুমোদন করে না তেমনি তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুব্রত দত্ত জানিয়েছেন, ‘সৌমিত্রকে শুধু এটাই বলব একজন সাংসদ বাড়ির মা বোনেদের বিক্রির কথা বলছেন! এরাই তো বলেন বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এর কথা বলেন। সৌমিত্র আর কত নীচে নামবেন? নিজের স্ত্রীকে রাখতে পারলেন না, বাড়ির সম্মান কোর্ট অবধি গেল। তার পরও তাঁর কাছ থেকে এত নিম্নমানের বিবৃতি আশা করিনি। মা সম্পর্কে যে এমন কথা বলতে পারে সে কখনও সন্তান হতে পারে না।’