নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলায় চলে এসেছে ওমিক্রন। ছাড়াচ্ছেও বেশ দ্রুত গতিতে। দেশের মধ্যে এখন ওমিক্রন সংক্রমনের হিসাবে বাংলার স্থান চতুর্থ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোভিডের যে কটি স্ট্রেন এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়েছে তা সে ‘আলফা’, ‘বিটা’, ‘গামা’, ‘ডেল্টা’ যাই হোক না কেন তারা সবাই ওমিক্রনের থেকে বহু যোজন কদম পিছিয়ে সংক্রমন ছড়ানোর ক্ষেত্রে। গবেষণা বলছে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা কোভিডের সর্বশেষ স্ট্রেন ডেল্টার থেকেও পাঁচ গুণ বেশি। অর্থাৎ বাংলা বেশ বড় বিপদের মুখেই দাঁড়িয়ে। তবে মন্দের ভালো এটাই যে এখনও পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ওমিক্রনের মৃত্যুর হার বেশ কম। তবুও বিষয়টি কিন্তু বিন্দুমাত্র লঘু করা যাবে না। তাই রাজ্য সরকারও কোমর বাঁধছে ওমিক্রনের মোকাবিলার জন্য। কেননা এই স্ট্রেনটিতে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁদের চিকিৎসা ঘরে থেকে করা যাচ্ছে না, ভর্তি করাতে হচ্ছে হাসপাতালে। তাই বাংলাজুড়ে ওমিক্রন মোকাবিলায় রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে পরিকাঠামোগত ভাবে উন্নত করা হচ্ছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, ওমিক্রন মোকাবিলায় তাঁরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি কমিটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা করে তাঁদের পরামর্শ মতো কাজ করা হচ্ছে। করোনার দু’টি পর্বে প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাই বিষয়টি এখন অনেকটাই জানা। আগের দু’টি পর্বে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে গোটা দেশে, এমনকি, বিশ্বের পরিসংখ্যানে রাজ্যের মৃত্যুর হার সব থেকে কম। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শহর-জেলা সর্বত্রই পরিকাঠামো উন্নয়নের অনেক কাজ হচ্ছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে সরকারি হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতাল এবং সরকার-অধিগৃহীত বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ৬০০-রও বেশি হাসপাতালে মোট ৩৩,৪৬৪টি কোভিড শয্যা ছিল। যা এখন কমিয়ে ২৩,৯৪৭টি করা হয়েছে। সে সময়ে বেসরকারি হাসপাতালের যতগুলি করে শয্যা সরকার নিয়েছিল, তার প্রায় সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার শহর এবং জেলা স্তরের সরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজন মতো একটি-দু’টি করে কোভিড ওয়ার্ড রেখে বাকিগুলি অন্য পরিষেবায় ব্যবহার করতে।’
অজয়বাবু আরও জানিয়েছেন, ‘রাজ্যে এখন কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কম। হাসপাতালে ভর্তির হারও তুলনায় অনেক কম। ফলে অধিকাংশ হাসপাতালের কোভিড শয্যা ফাঁকা থাকছে। তাই অন্য রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, সে কথা মাথায় রেখেই সরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একটি-দু’টি করে কোভিড ওয়ার্ড রেখে বাকিগুলি অন্য পরিষেবায় ব্যবহার করতে। তবে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি ও এমআর বাঙুর হাসপাতালে এখনও কোভিডের চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ পরিকাঠামো রাখা থাকছে। ওমিক্রন সন্দেহভাজনদের জন্য ই দুই হাসপাতালেই আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ডও রাখা থাকছে। রাজ্যে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে আবার নন-কোভিড শয্যাগুলিকে পুনরায় কোভিড চিকিতসার জন্য ফেরানো হবে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে শহরের যে সব হাসপাতালে ১৫০টি শয্যা ছিল এ বার তার সঙ্গে আরও ৫০টি শয্যা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই রকম পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। পাশাপাশি তিন দিনের নোটিসে পুনরায় শয্যা নেওয়ার বিষয়েও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশিকা জারি করে দেওয়া হয়েছে। জেলা থেকে শহর মিলিয়ে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে মোট ৩,৮১৬টি শয্যাকে শিশুদের কোভিড চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৬৪টি নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (নিকু), ২২৬টি পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু), ২৪৩৮টি এসএনসিইউ শয্যা এবং শিশুদের বয়স অনুযায়ী ৫০৭টি ভেন্টিলেটরও প্রস্তুত রয়েছে।’
এর বাইরে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, এখন যা শয্যা রয়েছে, তার পাশাপাশি ‘ইমার্জেন্সি কোভিড রেসপন্স প্যাকেজ’ প্রকল্পে জেলা স্তরের হাসপাতালগুলির চত্বরে ২০-১০০টি শয্যার ‘প্রি ফ্যাব্রিকেটেড’ কোভিড ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ পৌঁছেছে। আবার প্রতিটি হাসপাতালে ২৪ শয্যার ‘হাইব্রিড সিসিইউ’ তৈরির কাজ চলছে। তাই ওমিক্রন খুব দ্রত হারে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়লে সেই পরিস্থির মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো রাজ্যে মজুত রয়েছে।