নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপির(BJP) নেতানেত্রীরা থেকে থেকেই এমন সব ফতোয়া জারী করেন বা হুমকি দেন যা দেখে মনে হয় পদ্মশিবিরই হিন্দু ধর্মের(Hindu Dharma) মালিক। তাঁরাই ঠিক করে দেবে হিন্দুরা কে কী করবে, কী পরবে, কী বলবে, কী খাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই গেরুয়া শিবিরেরই প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই বাংলার মাটিতে উঠল চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করার অভিযোগ। আর সেটাও এমন একটা সময়ে যখন দোরে কড়া নাড়ছে ভোটগ্রহণের দিন। রাজ্যের পূর্ব বর্ধমান লোকসভা(Purba Burdwan Constituency) কেন্দ্রে এবারে পদ্মশিবিরের প্রার্থী হয়েছেন নদিয়া জেলার হরিণঘাটা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক তথা কবিয়াল অসীম সরকার(Ashim Sarkar)। তাঁর বিরুদ্ধেই এখন উঠেছে, ভোটপ্রচারে নেমে চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করার অভিযোগ। এই ঘটনার জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে বড় অংশের ভোটারদের মধ্যে। তবে তার থেকেও বেশি মুখ পুড়ছে পদ্মনেতাদের। প্রশ্ন উঠছে পদ্মের অন্দরেই, কেন এমন একজনকে প্রার্থী করা হল যিনি হিন্দু ধর্মকেই শ্রদ্ধা করেন না!
ঠিক কী হয়েছে? গত মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা পূর্বস্থলীতে বিজেপির নির্বাচনী জনসভা ছিল। সেই সভায় হাজির ছিলেন অসীমও। এখন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেই সভা থেকে তিনি চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করে নিজের কথা বসিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছেন। সেই ঘটনায় এখন ফুঁসছে বাংলার পুরোহিত সমাজ। তাঁদের দাবি, চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করা সনাতন হিন্দু ধর্মের অপমান। কোন দুঃসাহসে এই ঘটনা ঘটালেন অসীম? কে তাঁকে এত বড় সাহস দিল? তাঁর যদি মনে হয় মতুয়া আলাদা ধর্ম, তো তিনি থাকুন সেই ধর্ম নিয়ে। কিন্তু হিন্দু ধর্মের দেবদেবী নিয়ে এই ছেলেখেলা করার স্পর্ধা তাঁকে কে দিয়েছে? পূর্বস্থলীর বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এই ঘটনায় অসীমকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘এটা চরম অন্যায়। চণ্ডীপাঠের মন্ত্র বিকৃত করা হয়েছে। এমন মূর্খামি করা উচিত নয়।’ ঘটনাটির জেরে সরব হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তিনি জানিয়েছেন, ‘সনাতন হিন্দু ধর্মের রীতি-ঐতিহ্য মেনে মা দুর্গার সামনে চণ্ডীপাঠ করা হয়। সেখানে কবিয়াল এরকম প্রকাশ্যে ভুল মন্ত্রোচ্চারণে চণ্ডীপাঠের মূল মন্ত্রকে বিকৃত করে মা দুর্গাকে অপমান করেছেন। প্রকাশ্যে কবিয়ালের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন পূর্বস্থলীতে অসীম সরকারের সমর্থনে আয়োজিত ওই জনসভায় বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার বহু নেতা সহ রাজ্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেই সভাতেই অসীমবাবু জানান তিনি চণ্ডীপাঠ করবেন। তারপরই চণ্ডীপাঠের সুরে ‘যা পিসি সর্বঘটেষু’ বলে তৃণমূলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। চণ্ডীপাঠ শেষে সভায় আসা কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে অসীমবাবু বলেন, ‘আমার চণ্ডীপাঠ খারাপ হয়েছে নাকি?’ ঘটনার জেরে তৃণমূলের(TMC) পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপি আবার মুখে হিন্দু ধর্ম নিয়ে বড় বড় কথা বলে। অথচ চণ্ডীপাঠ বিকৃত করে হিন্দু ধর্মের অপমান করেছেন বিজেপিরই প্রার্থী ও বিধায়ক। চণ্ডীপাঠের মূল মন্ত্র আদৌ কবিয়াল জানেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। তা না হলে এভাবে তা বিকৃত করতেন না।’