নিজস্ব প্রতিনিধি: পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার তমলুক সদর মহকুমার ময়না(Moyna) ব্লকটি একসময় বাম দুর্গ হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছিল। ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের পরে তা তৃণমূলের(TMC) দখলে আসে। কিন্তু তারপরেও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে জয়ী হয় বিজেপি(BJP)। জিতেছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। সেই নির্বাচনের দেড় বছরের মাথায় কিনা দেখা গেল, এলাকারই একটি কৃষি সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবকটি আসনেই জিতে গিয়েছে তৃণমূল। সেই জয়ের ছবি সামনে আসতেই বিজেপির নেতারা কান্না জুড়েছেন, সন্ত্রাস করে তৃণমূল কাউকে প্রার্থী হতে দেয়নি। কিন্তু বিজেপির এই দাবির পাশাপাশি পাল্টা প্রশ্নও উঠছে। যে জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে চোখ চোখ রেখে বিজেপি ৭টি আসনে জয়ী হতে পারে সেই জেলাতেই কেন প্রার্থী দিতে পারল না বিজেপি। আর সেটাও নিজেদের জেতা আসনের এলাকায়!
আরও পড়ুন চোখের ছবি মিলিয়ে এবার রেশন দেওয়া হবে বাংলায়
ময়নার চিরঞ্জীবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৭৮টি আসনের মধ্যে সবকটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। য়ার তার জেরেই প্রশ্ন হচ্ছে, বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারল না কেন? এই জেলাতেই তো নন্দকুমার মডেল সামনে রেখে তৃণমূলকে হারিয়ে একটি সমবায় সমিতিতে জয়ী হয়েছিল বহু বিতর্কিত রাম-বাম জোট। সেই জায়গায় ময়নায় কেন প্রার্থীই দিতে পারল না বিজেপি বা বামেরা? বিজেপির তমলুক জেলা সংগঠনের সভাপতি তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘নির্বাচনের নামে আদতে প্রহসন হচ্ছে। সন্ত্রাস করে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি আমাদের কর্মীদের। তাই ওরা জিতেছে। ওখানে গণতন্ত্রের হত্যা করা হয়েছে।’ সিপিআইএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহিও কার্যত একই কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এই দাবি তুলে দুটি দলই তাঁদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে পারছে না। বিশেষ করে বিজেপি। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের যে সব এলাকা থেকে বিজেপি লিড পেয়েছিল সেই সব এলাকার বাসিন্দারাই এই সমবায় সমিতির সদস্য। রাতারাতি তাঁরা কেন বিজেপি থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠে গিয়েছে।
আরও পড়ুন টেটের ময়দানে ভুয়ো অ্যাডমিট কার্ড, প্রশ্নের মুখে স্বচ্ছতা
জানা গিয়েছে, ময়না বিধানসভা কেন্দ্রের আসনান, ঘোড়াবেড়িয়া, চিরঞ্জীবপুর, মির্জানগর, বল্লভপুর, কালিকাদাড়ি এবং শ্যামপুর, এই সাত গ্রামের সদস্যদের নিয়েই চিরঞ্জীবপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি গড়ে উঠেছে। আর এই সব এলাকা থেকেই একুশের ভোটে লিড পেয়েছিল বিজেপি। তাহলে এখন কেন সেই বিজেপিই প্রার্থী দিতে পারল না। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, আমজনতা নিজের ভাল বেশ ভালই বোঝেন। তাঁরা দেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা দেন তা তিনি রাখেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের হাত ধরেই তাঁরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, সবুজশ্রী, বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, বাংলার বাড়ি, কৃষকবন্ধু, স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী পাচ্ছেন। বিজেপি তাঁদের কী দিয়েছে। একুশের ভোটে জেতার পরে দিন্দা কয়দিন দলের হয়ে মাঠে ময়দানে নেমেছেন? এলাকারই বা কী উন্নয়ন হয়েছে? বিজেপি যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের ভোট আদায় করেছিল সেটা বুঝতে পারেই আমজনতা এখন বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
আরও পড়ুন অভিষেকের সভার আগে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ, মৃত ৩
রাজনৈতিক কচকচানি যতই চলুক না কেন, ময়নায় তৃণমূলের জয়ের জেরে কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে জেলার রাজনীতিতে অধিকারীদের প্রভাব নিয়েও। কেননা ময়নার বিধায়ক অশোক দিন্দা(Ashok Dinda) রীতিমত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। অথচ সেই দিন্দার বিধানসভা কেন্দ্রের সম্বায় সমিতির নির্বাচনে প্রার্থীই দিতে পারল না বিজেপি। তাহলে কী জেলার রাজনীতিতে অধিকারীদের প্রভাব ক্রমশ বিলুপ্তির পথে? শুভেন্দুর নিজের জেলায় বিজেপি যদি এই হাল হয় তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী হবে? তখন জেলার সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে তো বিজেপি? নাকি সেখানেও দেখা যাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল প্রার্থীদের জয়লাভের ছবি! নাকি তৃণমূলকে জমি ছেড়ে দিয়ে ঘরওয়াপ্সির প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠেছে ময়নার বুকে।