কৌশিক দে সরকার: এক আধ জায়গায় নয়, সভার পর সভা। একের পর এক রোড শো। শুধুই কালো মাথার ভিড়। আর এক রাশ মহিলার উপস্থিতি। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিনবঙ্গ সর্বত্র একই ছবি। আর সেই ছবিই এখন বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ভোটের মরশুমে সন্দেশখালিকেই ‘অস্ত্র’ করে এগোচ্ছিল বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দুইজনই একের পর এক সভায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তুলে আনছিলেন সন্দেশখালি প্রসঙ্গ। কিন্তু এবার সেটাই যেন বুমেরাং হয়ে গিয়েছে। সন্দেশখালির এক ভিডিও-ই বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। পদ্মের নেতারাই এখন মানছেন, সন্দেশখালি ফ্লপ। অথচ শাসক শিবিরে ভিড়ের ছবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের পর এক সভা থেকে শুরু করে রোড-শো জনস্রোত, জনসুনামির চেহারা নিচ্ছে। তুলনায় ফাঁকা থাকছে পদ্মের সভা। আর তৃণমূলের(TMC) সভা বা রোড-শোতে ভিড়ের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকছে মেয়েরা। আর সেটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপির।
ভোটপ্রচারের প্রথম থেকেই তৃণমূলের সভায় মহিলাদের জোয়ার চোখে পড়ছে সকলেরই। এমনকি ভোটগ্রহণের(Loksabha Election 2024) প্রথম দুই দিনেও বুথে বুথে নজর টেনেছে মহিলাদের উপস্থিতি। অনেকেই একে লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রভাব বলছেন। কিন্তু ভোট বিশেষজ্ঞ থেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সবাই তৃণমূলের সভায়-মিছিলে মহিলাদের ঢলকে শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডারের প্রভাব বলে মানতে নারাজ। তাঁরা মমতা-অভিষেকের সভা-মিছিলে মহিলাদের সক্রিয় উপস্থিতির পিছনে আরও অনেক কারণ খুঁজে পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল সুপ্রিমো নন। মমতা এখন নারী ক্ষমতায়ণের(Women Empowerment) প্রতীক হয়ে উঠেছেন। আর সেটা শুধু বাংলার বুকেই নয়, গোটা ভারতে। দেশে তিনিই এখন একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এবং এমন ক্ষমতাশালী যাকে মোদি-শাহ সর্বশক্তি দিয়েও হারাতে পারেন না। যিনি বিজেপিকে প্রতি পদে পদে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন হাসতে হাসতে। যিনি বিজেপিকে গোহারান হারাতে পারেন বাংলার মাটিতে। যিনি অবলীলায় বলতে পারেন, ‘এবার আর ৪০০ পার নয়, বিজেপি একদম পগার পার’।
ইন্দিরা গান্ধি বিস্মৃত হননি ভারতের মনন থেকে, সে মোদি যতই ভারতকে কংগ্রেস মুক্ত করার ডাক দিন না কেন! ইন্দিরা আজও এদেশে নারী ক্ষমতায়ণ ও উন্নয়নের সেরা মুখ। কিন্তু তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি এখন ইতিহাসের পাতায়, স্মৃতির খাতায়। মমতা কিন্তু প্রচন্ড ভাবে আমাদের মধ্যে রয়েছেন। হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছেন। চোখের সামনে রয়েছেন। মানুষের মাঝে রয়েছেন। রাজপথের ভিড়ে রয়েছেন। সভার মধ্যমণি হয়েছে বিচরণ করছেন। এর নাগাল কে না পেতে চাইবে? সেই নাগাল পেতে, চোখের দেখা দেখতে, কথা শুনতে মমতার সভায় আর মিছিলে লোক উপচে পড়ছে। অভিষেক মানুষের কাছে এখনও তৃণমূলের হর্তাকর্তা বিধাতা নন, তিনি এখনও মানুষের কাছে মমতার উত্তরসুরী, তাঁর ভাইপো। মানুষ অভিষেকের মধ্যেই মমতার লড়াকু, জেদী, আত্মবিশ্বাসী ছবি খুঁজে পেয়েছেন। তাই তাঁর কর্মসূচীতেও ভিড় উপচে পড়ছে মহিলাদের। তাছাড়া, এই বাংলার বুকে মেয়েরা যে সব থেকে বেশি নিরাপদ তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে কেন্দ্রের নানা রিপোর্টে। মমতার হাত ধরে বাংলার মেয়েরা আজ শুধু নিজেদের স্বনির্ভর করে তুলছে তাই নয়, তাঁরাও সমান আত্মবিশ্বাসে নিজের জীবনের পথে এগিয়ে চলেছেন। আসলে মমতা পেরেছেন বাংলার মেয়েদের পথ দেখাতে, জীবনের পথে এগিয়ে দিতে, হার না মানা শেখাতে।