নিজস্ব প্রতিনিধি: সব ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। নিউটনের সেই শর্ত মেনেই এবার বঙ্গ বিজেপিতে শান্তনু ঠাকুরকে কোনঠাসা করার কাজ শুরু করে দিল দলের রাজ্য নেতৃত্ব। সূত্রের খবর সবটাই করা হচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আর সঙ্ঘের নির্দেশে। এতদিন দলের যে সব বিধায়কদের শান্তনু ঠাকুরের পাশে দেখা যাচ্ছিল এবার সেই সব বিধায়কদেরই আসন্ন পুরনির্বাচনে নিজ নিজ এলাকায় থাকা পুরসভার দলীয় কনভেনার বানিয়ে দিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। আর তার পরেই দেখা যাচ্ছে শান্তনুর পাশে আর বিক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়কদের দেখা যাচ্ছে না। শান্তনু ঠাকুরের পৃথক মঞ্চ বা দল গড়ার পরিকল্পনাতেই কার্যত জল ঢালার পরিকল্পনা নিচ্ছে বঙ্গ বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে, বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধদের মাথা এখন শান্তনু। তিনি নানান দাবি দাওয়া তুলে দলের নেতৃত্বকে চাপে রাখার যেমন চেষ্টা করছেন তেমনি বিক্ষুব্ধদের নিয়ে পৃথক মঞ্চ বা দল গঠনের কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তলে তলে। এমনকি প্রকাশ্যেই দলবিরোধী বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি দলকে চ্যালেঞ্জও জানাচ্চেন। পৃথক মঞ্চ বা দল গঠনের স্বপক্ষে জনসংযোগের কর্মসূচীও নিচ্ছেন। আর এইসব কিছু দেখে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে রাজি নন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও সঙ্ঘ নেতৃত্বও। তাঁরা এখন দ্রুত শান্তনুর ডানা ছাঁটার পথে হাঁটা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর আশেপাশে যেসব বিক্ষুব্ধরা জমাট বাঁধছিলেন তাঁদেরও সরিয়ে নিতে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার পাশাপাশি তাঁদের নিজ নিজ এলাকায় থাকা পুরসভাগুলিতে দলীয় কনভেনার করে দেওয়া হয়েছে। মজার কথা এই বিধায়কদের প্রায় সবাই মতুয়া সম্প্রদায় ভুক্ত। শান্তনুর পরিকল্পনা ছিল মতুয়া বিধায়কদের নিয়েই আলাদা মঞ্চ বা দল গড়ার। এখন সেখানেই জল ঢেলে দিল বিজেপি নেতৃত্ব।
বঙ্গ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় ৬ জন বিধায়ক রয়েছেন। এরা হলেন বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া, বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদার, গাইঘাটায় বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার, কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায় ও রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। এদের মধ্যে স্বপন মজুমদার সহ বাকি সকলেই বিক্ষুব্ধ হিসাবে শান্তনুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বপন প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মতুয়া হলেও শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে নেই। কেননা শান্তনু নিজের স্বার্থে বিক্ষুব্ধদের তাতাচ্ছেন ও তাঁদের বিপথে চালিত করছেন। এখন স্বপন বাদে বাকি ৫ বিধায়ককেই নিজ নিজ এলাকায় থাকা পুরসভাগুলিতে দলীয় কনভেনার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। ইতিমধ্যেই অশোক কীর্তনীয়া, অসীম সরকার, অম্বিকা রায় ও মুকুটমণি অধিকারীর সঙ্গে দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কথা বলেছেন বনগাঁ লোকসভার সাংগঠনিক জেলার ইনচার্জ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রত ঠাকুরকে গোবরডাঙা পুরসভার দলীয় কনভেনার বানানো হলেও তিনি সেই কাজের দায়িত্বগ্রহণ করেননি। বরঞ্চ জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না রামপদ দাসকে সভাপতির পদ থেকে সরানো হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি পুরসভার কোনও দায়িত্ব নেবেন না। ঘটনা হচ্ছে বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়া এবং তাঁদের নিজ নিজ এলাকার পুরসভাগুলিতে দলীয় কনভেনার পদ দেওয়ার পর তাঁরাও কিন্তু সুর নরম করেছেন। একই সঙ্গে এটাও দেখা গিয়েছে যে, ওই চার মতুয়া বিধায়ক আর শান্তনুর পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। শান্তনুর পাশে এখন কেবল তাঁর ভাই সুব্রত ঠাকুর। এমনকি পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার যে ৯ বিধায়ককে একসময় শান্তনুর সঙ্গে পিকনিক করতে দেখা গিয়েছিল তাঁরাও আর কেউ শান্তনুর পাশে নেই।