নিজস্ব প্রতিনিধি: অভিযানে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। একই সঙ্গে উস্কে দিয়েছেন বিতর্কও। কেননা যাকে দুর্নীতি দমন অভিযানে নামানো হয়েছিল, সম্ভবত তিনি নিজেই বিশাল বড় দুর্নীতি করে বসে আছেন। শুধু তাই নয়, সেই দুর্নীতির জন্য তাঁর বিরুদ্ধেই তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা CBI। আর স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার বুকে সন্দেশখালির ঘটনা থেকে যে Advantage পাওয়ার আশা করেছিল গেরুয়া শিবির এবং যা তাঁরা নিতেও শুরু করে দিয়েছিল, মুহুর্তের মধ্যে তা এবার হাতছাড়া হতে চলেছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে সন্দেশখালিতে(Sandeshkhali) যে ED কর্তাকে পাঠানো হয়েছিল, আর যার বিরুদ্ধে CBI তদন্ত করছে, তাঁরা যদি একই ব্যক্তি হন তাহলে জেনে বুঝে কেন তাঁকে পাঠানো হয়েছিল? নজরে ED কর্তা রাজকুমার রাম(Rajkumar Ram)।
রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে(Ration Distribution Scam) রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ED’র হাতে আগেই গ্রেফতার হয়েছেন। সেই দুর্নীতি কাণ্ডে ED’র দেওয়া চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে দুর্নীতির পরিমাণ নাকি ১০ হাজার কোটি। সেই দুর্নীতির তদন্তের সূত্রেই গত পরশু সাত সকালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি-১ ব্লকের ন্যাজাট থানার সরবেড়িয়া গ্রামে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহাজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে গণরোষের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা Enforcement Directorate বা ED’র আধিকারিকদের। উন্মত্ত জনতার হাতে মারধর খেয়ে ৩জন ED আধিকারিককে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে। সেই ঘটনায় মোট ৩টি FIR দায়ের হয়েছে ন্যাজাট থানায়। তারমধ্যে ১টি FIR আবার হয়েছে ED’র আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর থেকেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, ED’র আধিকারিকদের ওপর হামলাবাজির নেপথ্যে ছিল আক্রান্ত ED’র আধিকারিকদের উস্কানিমূলক মন্তব্য।
তৃণমূলের সেই অভিযোগকেই এবার জমাট বাঁধিয়ে দিল রাজকুমার রামের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ। একটি FIR’র প্রতিলিপিকে কেন্দ্র করে তেমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সেই FIR অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, রাজকুমার রাম নামে এক ED আধিকারিকের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করা হয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও আয়বহির্ভূত সম্পতির মালিকানা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২২ সালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ও ১২০-বি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৩(২) ও ১৩(১)(বি) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। ২০১৬ সালে ED’র অফিসার পদে এসেছিলেন রাজকুমার। ২০১৮ সালে পদোন্নতি হয়ে সহ-অধিকর্তা হন তিনি। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর দফতরে কর্মরত ছিলেন রাজকুমার। যে সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়, সেই সময় গুয়াহাটির দফতরে বদলি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, বেঙ্গালুরুতে কর্মরত থাকাকালীনই তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ এতটাই বেড়েছে যে, তা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। ঘটনাচক্রে, সন্দেশখালিতে আক্রান্ত হওয়া রাজকুমারও এক সময়ে বেঙ্গালুরু ও গুয়াহাটির ED দফতরে কর্মরত ছিলেন। যার জেরেই দু’জনেই একই ব্যক্তি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। যদিও এ ব্যাপারে কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি।
দুর্নীতি ঠিক কীরকম? অভিযোগ, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে রাজকুমারের সম্পত্তির বহর। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে রাজকুমারের ১ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল। ২০২০ সালের মার্চের ৩১ তারিখে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রী চন্দ্রমা কুমারীর নামে থাকা সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে হয় ৫৭ লক্ষ টাকা। এ দিকে, এই সময়ের মধ্যে রাজকুমারের আয় হয়েছে ১ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। বাড়তি ওই ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকার উৎস কী, প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েই। সেই ইডিকর্তা এবং সন্দেশখালির রাজকুমারের মধ্যে বেশ কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকলেও, দু’জনেই একই ব্যক্তি কি না, তা অবশ্য পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তবে সন্দেহ নেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসায় এখন সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে অন্য প্রশ্ন উঠে গেল। প্রশ্ন, কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রকে রূপ দিতেই কী রাজকুমারকে সন্দেশখালি পাঠানো হয়েছিল! কী সেই ষড়যন্ত্র? শীতলকুচির মতো কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের গুলি চালানার ঘটনা? মন্দের ভালো এবার আর সেই ভুল করেননি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।