এই মুহূর্তে




ব্রিটিশ পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন স্বয়ং মা কালী, কোথায় সেই মন্দির?

নিজস্ব প্রতিনিধি: এ রাজ্যে হাজার হাজার কালীপুজো হয়। তার অধিকাংশের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে নানা লোকগাথা, জনশ্রুতি। সেসব কাহিনী শুনলে গায়ে কাঁটা দেড়। গোটা পশ্চিমবঙ্গে এমন অজস্র কালীমন্দির রয়েছে যেগুলি ডাকাতের  হাতে প্রতিষ্ঠিত। আজ তেমনই এক মন্দিরের কাহিনী জানা যাক। ডাকাতি করে এসে ডাকাতরা করত মা কালীর পুজো, তাই কালীর নাম হয়েছে ডাকাতে কালী। এই পুজোর বয়স প্রায় ১১২ বছর। ভক্তদের কথায় অত্যন্ত জাগ্রত এই ডাকাতে কালী। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ইতিহাস।

নদিয়ার মাজদিয়ার ঘোষপাড়ার ডাকাত কালীতলায় ধুমধাম করে পুজো হচ্ছে এবারও। প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে ঐতিহাসিক নানা কাহিনী। স্থানীয় শিক্ষক সুকুমার ঘোষের কাছ থেকে জানা যায় ,আজ থেকে প্রায় ১১২ বছর আগে ওই গ্রামবাসীদের দিন কাটছিল অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে। দুবেলা দুমুঠো খেতে পাওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বাধ্য হয়ে গ্রামেরই কয়েকজন ডাকাবুকো যুবক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে তাঁরা ডাকাতি করবেন। ডাকাতি করেই জোগাড় করবেন গ্রামের মানুষের জন্য খাবার। তখন চলছে কড়া ব্রিটিশ শাসন। হঠাতই যুবকেরা খবর পেলেন , অবিভক্ত বাংলার ঢাকার দিকে যাচ্ছে ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেন। যুবকেরা সিদ্ধান্ত নিলেন ওই ট্রেনেই তারা ডাকাতি করবেন। গভীর রাতে মাজদিয়ার ইছামতি ব্রিজের ওপর দিয়ে ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেন যখন কু -ঝিঁক ঝিঁক শব্দ তুলে যাচ্ছে তখন হাতে লন্ঠনের আলো দেখিয়ে ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল ট্রেনটিকে। সময় নষ্ট না করে ট্রেনের বগি থেকে অজস্র কাপড়ের বান্ডিল ফেলে দেওয়া হল নদীর জলে। লুট করা হল খাদ্যসামগ্রীও। তারপর ডাকাতরা লণ্ঠনের আলো নিয়ে সরে যেতেই ট্রেন চলল নিজ গন্তব্যে।

ট্রেন বেড়িয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই খবর পৌঁছে গেল ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে। চারদিকে পড়ল খোঁজ খোঁজ রব। ডাকাতদলের লোকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন জঙ্গলে। ব্রিটিশ বাহিনী নদীতে ফেলা কাপড়ের বান্ডিলের হদিশ বহু খুঁজেও আর পায়নি। সেই কাপড় নদীর জল থেকে তুলে ও লুট করা খাদ্যসামগ্রী ডাকাতেরা গ্রামের মানুষের মধ্যে বিলি করে দেন। ওদিকে ব্রিটিশরা কিন্তু ডাকাতদের সন্ধানে খোঁজ খবর চালাচ্ছিল পুরোদমে। ব্রিটিশবাহিনীর কাছে ধরা পড়ার ভয়ে জঙ্গলেই কাটতে লাগল ডাকাতদের সময়। শোনা যায় সেই সময় তাঁরা সর্বদা স্মরণ করতেন মা কালীকে। বলতেন,”মা তুমি বাঁচিয়ে দাও, আমরা তোমার পুজো করব।” অলৌকিকভাবেই সেবার আর তাঁদের সন্ধান পায়নি ব্রিটিশ পুলিশ। ফিরে যেতে হয়েছিল তাদের।

ব্রিটিশ বাহিনী যেদিন ফিরে গিয়েছিল, তার পরদিনই ছিল দীপান্বিতা অমাবস্যার কালীপুজো। জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে এরপর ডাকাতদল একটি বেল ও নিম গাছের পাশে বেদি বানিয়ে মায়ের পুজোর আয়োজন করেন। বহু মানুষ এখানে এসে আজও মায়ের পুজো দেন। শোভাযাত্রায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ পা মেলান। তাই যদি বলা হয় ডাকাতে কালী এখন এলাকার মানুষের কাছে একটা আবেগ, তা মোটেই অত্যুক্তি হবে না।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে বন্দি কাকদ্বীপের ১৪ ম‍ৎস্যজীবী

বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামে ত্রাণ হাতে পৌঁছালেন মন্ত্রী, দিলেন আশ্বাস

দার্জিলিঙে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি এঁকেছিলেন মমতা, সেই বাড়ি পুড়ে ছাই

দুর্গাপুরে কালীপুজোয় এবারের থিম জৈন মন্দির, চোখের সামনে ভেসে উঠবে কালাপানির অত্যাচার

সাঁইথিয়ায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কে? ঘোষণা করে দিলেন কেষ্ট

রাস্তার মধ্যেই মহিলাকে জোরপূর্বক চুমু খেয়ে পালাল দুষ্কৃতী, সাঙ্ঘাতিক ঘটনা যোগী রাজ্যে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ