এই মুহূর্তে




শোল-বোয়ালে মায়ের ভোগ, কয়েক শতাব্দী পরেও একইরকম জাগ্রত দেবী চৌধুরানীর কালী

নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম রত্ন। সাহিত্য সম্রাট সৃষ্ট এই চরিত্রটি যে কাল্পনিক নয়, তা কমবেশি সকলেই জানে। ইতিহাসে সন্ন্যাসী ফকির আন্দোলনের সময় দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকদের নাম পাওয়া যায়। দেবী চৌধুরানীর পটভূমিকা রচিত হয়েছিল জলপাইগুড়িতে। তার আরাধ্যা দেবী ছিলেন কালী। চারদিক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে রুকরুকা নদী। কাছেই শ্মশান, তারই মাঝে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে দেবী চৌধুরানীর কালী মন্দির। সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ঘনিয়ে আসে, যখন নিঝুম হয়ে যায় চারদিক, তখন মা একা জেগে থাকেন। এই মন্দিরে দিনের বেলাতেও গা ছমছমে পরিবেশ। আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে এখানকার বিগ্রহ একটু আলাদা। এখানে মা কালীর হাতে কোনও অস্ত্র নেই। দেবীর এক হাতে রয়েছে নর মুণ্ড, অন্য হাতে সুরাপাত্র। জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ের কাছে এই মন্দিরে মায়ের ভোগ হয় শোল ও বোয়াল মাছ দিয়ে, দিতেই হয় বলির পাঁঠার মাংস।

লোকমুখে আজও শোনা যায়, মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রুকরুকা নদীতে চলত দেবী চৌধুরানীর বজরা। তাতে চেপে রঙ্গরাজের সঙ্গে দেবী চৌধুরানী আসতেন এই মন্দিরে পুজো দিতে। তাঁর হাতেই পুজো শুরু হয় এখানে। আগে বটগাছের নিচে মায়ের পুজো হত। সেই সময় দেবী পূজিতা হতেন বিশালাক্ষী রূপে। পুজো করতেন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এলাকার আদিবাসী শ্রমিকেরা। এরপর বেশ কিছুদিন কাটে। একসময় মায়ের পুজোর  দায়িত্ব নেয় জলপাইগুড়ি রাজ পরিবার।

মন্দিরের অবস্থান এমন স্থানে যে খুব বেশিদিন পূজো চালিয়ে যেতে পারেনি জলপাইগুড়ি রাজ পরিবার। ফলে তাঁরা হাত তুলে নেন। বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই নিজেরা তুলে নিয়েছেন পুজোর দায়িত্ব। পরে তৈরি হয়েছে পাকা মন্দির। এই মন্দিরের অন্যতম বিশেষত্ব, মন্দিরের প্রধান সেবায়েত হলেন একজন মুসলমান ৷ বংশপরম্পরায় ওই পরিবারের সদস্যরা, মন্দিরের নিত্যদিনের কাজ করেন ৷ তাই শুধু হিন্দু নয়, স্থানীয় মুসলমানদের কাছেও দেবী পূজ্য। বর্তমানে মন্দিরে যেখানে বিগ্রহের বেদি সেখানেই নাকি একসময় ছিল বিশাল কপিকল। সেটি ঘোরালেই খুলে যেত গুহার দরজা। এটা মূলত একটা সুরঙ্গ পথ। সেই সুরঙ্গ পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যেত জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ায়।

স্থানীয়রা দাবি করেন যে রুকরুকা নদীতে যে বজরা চলত তার প্রমাণ ছিল কয়েক দশক আগেও। দেবী চৌধুরানীর নামাঙ্কিত এই মন্দিরে একসময় নয়ন নামে এক কাপআলিকের বাস ছিল। তিনি পাতু দাস নামে একজনকে বলি দিয়েছিলেন। সেই অপরাধে ১৮৯০ সালে ফাঁসি হয়ে যায় ওই কাপালিকের। জলপাইগুড়ি জেলে আজো লিপিবদ্ধ রয়েছে সেই ইতিহাস। মন্দির চত্বরেই রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির আসন। আজও কৌশিকী অমাবস্যার রাতে তান্ত্রিকরা এসে সাধনা করেন এই মন্দিরে। মন্দিরের কাছেই রয়েছে একটি বটগাছ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেন ওই বটগাছটি অন্তত ৪০০ বছরের পুরনো। ওই বটগাছের নীচেই নাকি প্রথমে ছিলেন দেবী চৌধুরানীর কালী মা।

প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় ধুমধাম সহকারে এখানে কালীপুজো হয়। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি। অসম থেকেও ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসেন এই মন্দিরে। এখানে কালীপুজোর রাতে মাকে দক্ষিণা কালিকা হিসেবে নয়, শ্মশান কালী রূপে পুজো করা হয়। শ্মশানকালী বলেই মায়ের হাতে রয়েছেন নরমুণ্ড এবং সুরাপাত্র। মায়ের ভোগে থাকে নানা রকমের মাছ। এর মধ্যে শোল আর বোয়াল মাছ অবশ্যই রাখতে হয়। পুজোর রাতে বলি দেওয়া হয় একটি পাঠা। বিভিন্ন জন মানত করেও পাঠা বলি দেন। কালীপুজোয় দেবীর হাতে থাকা পাত্রে ঢেলে দেওয়া হয় সুরা। আগে মৃৎ মূর্তিতে পুজো হত। পরে ১৯৯৭ সালে রাজস্থানের জয়পুর থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকে ওই মূর্তিতেই চলে পুজো।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে বন্দি কাকদ্বীপের ১৪ ম‍ৎস্যজীবী

বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামে ত্রাণ হাতে পৌঁছালেন মন্ত্রী, দিলেন আশ্বাস

দার্জিলিঙে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি এঁকেছিলেন মমতা, সেই বাড়ি পুড়ে ছাই

দুর্গাপুরে কালীপুজোয় এবারের থিম জৈন মন্দির, চোখের সামনে ভেসে উঠবে কালাপানির অত্যাচার

সাঁইথিয়ায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কে? ঘোষণা করে দিলেন কেষ্ট

রাস্তার মধ্যেই মহিলাকে জোরপূর্বক চুমু খেয়ে পালাল দুষ্কৃতী, সাঙ্ঘাতিক ঘটনা যোগী রাজ্যে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ