নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরে অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol)। মোদি রাজের জমানায় কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হলেন তৃণমূলের(TMC) আরও এক হেভিওয়েট নেতা। আর সেই ঘটনা ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বদলে গিয়েছে বাংলার আমেজ। সিবিআইয়ের(CBI) হাতে অনুব্রত মণ্ডল আটক হতেই বাংলাজুড়ে জেলায় জেলায় রাস্তায় বেরিয়ে আমজনতাকে গুড় বাতাসা, নকুলদানা, মিষ্টি খাওয়ানোর পাশাপাশি রীতিমত অকাল হোলি উৎসবে মেতে উঠতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি(BJP) কর্মীদের। তাতে গা ভাসিয়েছেন পদ্মশিবিরের নীচুতলার নেতারাও। ঘটনাচক্রে আজ রাখি পূর্ণিমা। আর এদিনই সিবিআইয়ের হাতে আটক হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল। আর সেই ঘটনাকে ঘিরেই এদিন তীব্র কটাক্ষ হেনেছেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh)। বলেছেন, ‘রাখির দিনেই হাতে হাতকড়া পরল’। এর পাশাপাশি এই ঘটনা নিয়ে এদিন টুইটও করেছেন দিলীপ। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘অনুব্রত মণ্ডলের খেলা শেষ… লাইনে আরও অনেকে রয়েছেন।’
দিলীপের মতোই এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন বঙ্গ বিজেপির একাধিক নেতা। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar) জানিয়েছেন, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, তৃণমূল নেতারা জেলে। এ বার জেলে থেকে বিশ্রাম করুন। লুকোচুরির শেষে ধরা পড়ে গিয়েছেন।’ আবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল এক জন মাফিয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মুদির দোকান থেকে হাটে মাগুর মাছ বিক্রি করতেন। সে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক! কাদের নির্দেশে গরুপাচার, কয়লাপাচার, বীরভূম জেলায় যে অত্যাচার করেছে, বেশ কিছু মানুষকে খুন করা— তিনি যার যার নির্দেশে করেছেন আর মুড়ির টিনে করে টাকা পাঠিয়েছেন, তাঁদের নামগুলো বলুন।’ বঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন অনুব্রত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পারলেন না। ওঁর উত্থান তৃণমূলের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হয়নি। বোলপুরে অপার সাম্রাজ্য বিস্তার হয়েছে, অনুব্রতের নির্দেশ ছাড়া সম্ভব হয়নি। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে বাজেয়াপ্ত করেছেন। একাধিক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন বীরভূমে। পুলিশকে বোমা মারা, মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, কার নির্দেশে হয়েছে?’
তবে অনুব্রত আটক হতেই রক্ষণাত্মক ভূমিকা নিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের তরফে এই নিয়েচ এদিন প্রথম মুখ খুলেছেন সাংসদ শান্তনু সেন(Shantanu Sen)। তিনি জানিয়েছেন, ‘স্বচ্ছ ভাবে প্রশাসন চলে। সরকার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়। তদন্ত তদন্তের মতো চলুক। সিবিআইয়ের জমে থাকা কেসের পাহাড়ও জানি। একেকটা তদন্ত শুরু করে শেষ করতে পারে না। দ্রুত তদন্ত শেষ করুক। দল নজরে রাখছে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেবে। সিবিআইয়ের এফআইআরে থাকা অনেক বিজেপি নেতা রয়েছেন, যাঁরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করুক। এটা আমাদের দাবি।’ এদিকে জানা গিয়েছে, এদিন সিবিআই আধিকারিকেরা বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের নীচুপট্টিতে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে হানা চালিয়ে তাঁকে জেরা শুরু করেছিলেন। সেই সময় তাঁরা তাঁকে মূলত ৫টি প্রশ্ন করেন। সেই প্রশ্নগুলি হল – ‘আপনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কি গরু পাচারের সুবিধাভোগী? গরু পাচারের টাকা বখরা কি আপনার কাছে আসত? গরু পাচারে অভিযুক্তদের আপনি কি চিনতেন? যদি চিনতেন তাহলে তাঁদের সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক ছিল? গরু পাচারের টাকা কীভাবে বাঁটোয়ারা হত, সে সম্পর্কে কি আপনি কিছু জানতেন?’ কিন্তু সূত্রে জানা গিয়েছে এই ৫টি প্রশ্নের কোনও উত্তরই দেননি বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। আর তার জেরেই তাঁকে আটক করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। সম্ভবত এদিনই তাঁকে আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হবে।
অনুব্রত মণ্ডলকে আটক করলেও সিবিআই অবশ্য এখনও সরকারি ভাবে জানায়নি যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি তাঁকে দিয়ে কোনও রকমের অ্যারেস্ট মেমোতে সই করানো হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। আর এই জায়গায় দুটি বিষয় সামনে আসছে। এক, আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে অনুব্রতকে এদিন তোলার আগে তাঁর আইনজীবীর হাতে অ্যারেস্ট মেমো তুলে দিতে পারে। দুই, অনুব্রতকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দিল্লি গিয়ে সেখানে তাঁকে জেরা করতে পারেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার আধিকারিকেরা। সেক্ষেত্রে এদিন রাতেই তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হতে পারে অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে বিশেষ বিমানের মাধ্যমে। এদিকে অনুব্রত গ্রেফতার হতেই এদিন বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও হুগলি জেলার বালি ও পাথর মাফিয়াদের বাড়ির খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা। একই রকম ভাবে এদিন বীরভূম জেলার বেআইনি ক্রাশারগুলিতে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। মোট ২২টি সংস্থায় সেই তল্লাশি অভিযান চলছে বলে জানা গিয়েছে।