এই মুহূর্তে




মাতৃমূর্তিতে ফুটে উঠেছে শিরা-ধমনী, ভয়ঙ্করী রূপেও বরাভয় প্রদান করেন কঙ্কালেশ্বরী কালী

নিজস্ব প্রতিনিধি: এ রাজ্যে হাজার হাজার কালীপুজো হয়। তার অধিকাংশের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে নানা লোকগাথা, জনশ্রুতি। সেসব কাহিনী শুনলে গায়ে কাঁটা দেড়। গোটা পশ্চিমবঙ্গে এমন অজস্র কালীমন্দির রয়েছে যেগুলি ডাকাতের  হাতে প্রতিষ্ঠিত। আবার এমনও এক কালীমন্দির রয়েছে যার মূর্তিতেই নাকি ফুটে ওঠে শিরা, ধমণী। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও স্থানীয়রা বলেন এমনটাই সত্যি।

পূর্ব বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী মন্দির ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে কতশত কাহিনি। কে যে কবে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা কেউ জানে না। মা আছেন, পূজিত হন। ভক্তের সংখ্যা অগনিত। প্রথম দিকে মন্দির ছিল বিগ্রহহীন। কোনও বিগ্রহের পুজো হত না মন্দিরে। কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সাধক কমলানন্দ পরিব্রাজকের নাম।  শোনা যায় তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নে দেবী নাকি তাঁকে বলেছিলেন দামোদরের তীরে রয়েছেন তিনি, কমলানন্দ যেন তাঁকে নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাংলা ১৩২৩ সনে সাধক কমলানন্দ একটি পাথর উদ্ধার করেন। জনশ্রুতি, ওই পাথরেই নাকি খোদাই করা ছিল দেবী মূর্তি। পরে সেই দেবীমূর্তিই প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দিরে। এই কাহিনীর কোনও ঐতিহাসিক সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে মন্দিরটি যে বহু প্রাচীন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো এই টেরাকোটা আকৃতির মন্দিরে নটি চূড়া রয়েছে।

দেবী এখানে কঙ্কালরূপে বিরাজমান। চর্ম সার দেবীতনুতে স্পষ্ট অস্থি, শিরা,ধমনী। সেই কারণে শ্যামা এখানে পরিচিত ও পূজিতা কঙ্কালেশ্বরী রূপে। লোকমুখে তিনি হয়ে গিয়েছেন কঙ্কালেশ্বরী কালী। দেবী এখানে অষ্টভূজা। তাঁর উৎপত্তি শায়িত শিবের নাভিপদ্ম থেকে। আদিনাথের নাভি থেকে বেরিয়ে এসেছে এক পদ্ম। সেই পদ্মের উপর উপবিষ্টা দেবী। চালচিত্রে রয়েছে হাতি।

মনে করা হয়, দেবীমূর্তিটি হয়তো বৌদ্ধ বা পাল যুগের। যারা কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দিরে গিয়েছেন তাঁরা দেখেছেন মূল মূর্তির পাশেই রয়েছে আরও একটি ছোট মূর্তি। জানা যায়, মূল মূর্তিটি উদ্ধার হওয়ার পরে বেশ কিছুদিন কাটে। তারপর অন্য আর একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ছোট মূর্তিটি। সেটিও স্বপ্নাদেশ পেয়েই উদ্ধার করা। তারপর ছোট মূর্তিটিকে নিয়ে আসা হয় মন্দিরে। দেবী এখানে পূজিত চামুণ্ডা রূপে। অনেকের মতে এই মূর্তি আসলে বৌদ্ধ রীতিতে পূজিত চামুণ্ডার রূপ। তাই এটি বৌদ্ধ আমলে তৈরি। এই মূর্তির বিষয়বস্তু আবার খানিক ভিন্ন। এখানেও পাথরের উপরে কঙ্কালের রূপ ফুটে উঠেছে। আসলে একবার প্রবল বন্যা হয়। বন্যার জল যখন সরে তখন নদীগর্ভ থেকে পাওয়া যায় মূর্তি। কালো ব্যাসল্ট পাথরে তৈরি হয়েছে বিগ্রহ। উপরের ডান হাতে ত্রিশূল, পায়ের দুপাশে দুটি শিয়াল।

সারা বছর নিত্য পুজো হওয়ার পাশাপাশি দীপান্বিতা অমাবস্যায় পূজিত হন কঙ্কালেশ্বরী কালী। প্রচন্ড জাগ্রত এই মন্দিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়। কালীপুজো মানে কাঞ্চননগরে হৈ হৈ ব্যাপার। মায়ের পুজো, আনন্দ উৎসব উপলক্ষে চলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভোগের ব্যবস্থা। এছাড়াও সারা বছরই মন্দিরে ১০ টাকার বিনিময়ে দুপুরে অন্ন ভোগ এবং রাত্রে ৫ টাকার বিনিময়ে রুটি খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই বছরও তাই অধীর আগ্রহে মায়ের বাৎসরিক শ্যামা রূপের পুজোয় অংশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন বর্ধমানবাসী।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হাতে বন্দি কাকদ্বীপের ১৪ ম‍ৎস্যজীবী

বন্যাবিধ্বস্ত গ্রামে ত্রাণ হাতে পৌঁছালেন মন্ত্রী, দিলেন আশ্বাস

দার্জিলিঙে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি এঁকেছিলেন মমতা, সেই বাড়ি পুড়ে ছাই

দুর্গাপুরে কালীপুজোয় এবারের থিম জৈন মন্দির, চোখের সামনে ভেসে উঠবে কালাপানির অত্যাচার

সাঁইথিয়ায় বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কে? ঘোষণা করে দিলেন কেষ্ট

রাস্তার মধ্যেই মহিলাকে জোরপূর্বক চুমু খেয়ে পালাল দুষ্কৃতী, সাঙ্ঘাতিক ঘটনা যোগী রাজ্যে

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ