নিজস্ব প্রতিনিধি: একজন নিজেকে এলাকাবাসীর কাছে পরিচয় দিতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের(Partha Chattopadhay) ভাগ্নে হিসাবে। অন্যজন পরিচয় দিতেন পার্থ ঘনিষ্ঠ হিসাবে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়(SSC Scam) তদন্তে নেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরোক্টরেট বা ইডি(ED) এবার এই দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে। প্রথম জনের নাম রাজীব দে(Rajib Dey), দ্বিতীয়জন হলেন মোবালিসা দাস(Monalisa Das)। ইডির ধারনা এই দুইজনকে জেরা করলে বেড়িয়ে আসবে আরও বেআইনি সম্পত্তির হদিশ। কেননা ইতিমধ্যেই নানান সংবাদমাধ্যমের দৌলতে ও তদন্তের সূত্র জানা গিয়েছে, এসএসসি কাণ্ডে কোটি কোটি টাকার যে দুর্নীতি হয়েছে তার টাকার একটা বড় অংশের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে এই দুইজন। তাই এদের জেরা করেই সেই সব সম্পত্তির হদিশ পেতে চাইছে ইডি।
বীরভূম জেলার বোলপুরে শান্তিনিকেতন লাগোয়া এলাকায় এমন ৭টি বাড়ির ছবি সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে সেগুলি এলাকার মানুষের কাছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি বলে পরিচিতি লাভ করেছে। এলাকাবাসীর দাবি, ওই ৭টি বাড়ি দেখাশোনা করতেন রাজীব দে নামে এক ব্যক্তি যেইনি নিজেকে পার্থবাবুর ভাগ্নে বলে পরিচয় দিতেন। ওই সব বাড়িতে পার্থবাবুরও নাকি যাতায়াত ছিল। এলাকাবাসীর দাবি, বাড়ির সামনে কড়া পুলিশি নিরাপত্তা ও বেশ কয়েকটি গাড়ির কনভয় দাঁড়িয়ে থাকার সূত্রে তাঁরা বুঝতে পারতেন পার্থবাবু এসেছেন। সাধারণত তিনি রাতে এসে ভোরে বেড়িয়ে যেতেন। যদিও কেউই পার্থবাবুর সঙ্গে রাজীব দে’কে একসঙ্গে দেখেননি। কিন্তু ওই সব বাড়ি যে পার্থবাবুর তা রাজীব দে’ই সকলকে জানিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন যে ওই সব বাড়ির কেয়ারটেকার হিসাবে তিনি কাজ করছেন। কিন্তু বিগত ২ মাস ধরে সেই রাজীব দে’কে এলাকায় আর দেখা যাচ্ছে না। যদিও ওই ৭টি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ির নেমপ্লেটে রাজীবের নাম রয়েছে। কিন্তু সেখানে তাঁর সন্ধান মেলেনি। আবার ইডিও পার্থবাবুর ভাগ্নে হিসাবে কোনও রাজীবের সন্ধান পায়নি। তবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, বোলপুরে ওই ৭টি বাড়ি ছাড়াও একটি ফ্ল্যাট এবং খোয়াইয়ে কয়েক বিঘা জমিরও দেখভাল করতেন রাজীব। কিন্তু এইসব সম্পত্তি পার্থবাবুরই কিনা তার কোনও প্রমাণ এখনও ইডির হাতে আসেনি। তাঁদের ধারনা রাজীব দে’র নাগাল পাওয়া গেলেই এই রহস্যের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। তাই রাজীবের সন্ধান শুরু করেছেন তাঁরা।
এদিকে ইডির নজরে আছেন আসানসোলের কাজি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপিকা মোনালিসা দাসও। তাঁর বাড়ি নদিয়া জেলার নদিয়ার পারয়াডাঙায়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহবিচ্ছিন্না, তাই আসানসোলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানেই থাকেন তিনি। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, যোগ্যতা না থাকলেও পার্থবাবুর বদান্যতায় তিনি অধ্যাপনার চাকরি পেয়েছেন। সেই অভিযোগের মিমাংসা অবশ্য এখনও হয়নি। তার মধ্যেই সামনে এসেছে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ। জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনার সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছিলেন মোনালিসা। কিন্তু যোগ্যতায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। আবেদন গ্রাহ্য না হওয়ায় তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করে বাংলা বিভাগের প্রধানকে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসেন। যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এখনও এই বিষয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ইডি জানতে পেরেছে এসএসসি দুর্নীতি মামলায় যে কোটি কোটি তাকার লেনদেন হয়েছে তার একটা বড় অংশই এই মোনালিসার হাত দিয়েই খরচ হয়েছে। সূত্রের মাধ্যমে ইডি আধিকারিকেরা জানতে পেরছেন বোলপুরের ৭টি বাড়ি, ১টি ফ্ল্যাট, কয়েক বিঘা জমি ছাড়াও দুর্গাপুর শহরে ২টি ফ্ল্যাটের মালিকানা সত্ত্ব হয়তো মোনালিসার নামে রয়েছে। তাই তাঁকেও এবার জেরা করতে চাইছেন ইডির আধিকারিকেরা।