নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধ কোটি টাকা নয়, পুরো ১০ হাজার কোটি টাকা। সেই টাকা আত্মসাৎ বা তছরুপের দায়ে একযোগে তদন্ত শুরু হয়েছিল ভারত(India) ও বাংলাদেশে(Bangladesh)। কেননা অভিযুক্তরা কার্যত দুই দেশেরই নাগরিক হয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে টাকা লুটে তারা ভারতে এসে বসবাস করছিলেন। সেই সঙ্গে এ পার বাংলার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বেশ ওঠাবসাও শুরু করেছিলেন। তবে সেই ওঠাবসা রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য নয়, রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রভাবশালীদের কালো টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে সাদা করে ফের তা সেই সব নেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। সেই ঘটনার বিরুদ্ধেইও এদেশে তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি(ED)। শুক্রবার সকাল থেকেই সেই ইডি’র আধিকারিকদের তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে এ পার বাংলার(Bengal) ৪টি জেলায়।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক সুকুমার মৃধা এপার বাংলায় চলে আসেন নব্বইয়ের দশকে। সেই সময় তাকে এদেশের নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে ভোটার করে দেওয়া ও রেশন কার্ড করে দেওয়ার কাজ করেছিলেন তারই প্রতিবেশী প্রণব কুমার হালদার বা পি কে হালদার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নবজীবন পল্লীতে বাড়ি প্রণব কুমার হালদারের। তার পাশেই জমি কিনে নিজের বাড়ি তৈরি করেন সুকুমার। শুরু করেন মাছের ব্যবসাও। কিন্তু এই মাছের ব্যবসার আড়ালেই শুরু হয় হাওয়ালার টাকা লেনদেনের কালো ব্যবসা। বছর ১৫ আগে বাংলাদেশে তৈরি হয় বেসরকারি ব্যাঙ্ক এনআরবি গ্লোবাল(NRB Global Bank)। অভিযোগ এই ব্যাঙ্কেরই ১০ হাজার কোটি টাকা মেরে বাংলাদেশ থেকে চম্পট দিয়েছে সুকুমার। আবার এই ব্যাঙ্কের কর্ণধান হিসাবে উঠে এসেছিল পি কে হালদারের নাম। মনে করা হচ্ছে এই পি কে হালদার হলেন অশোকনগরে সুকুমারের প্রতিবেশী প্রণব কুমার হালদার। অন্তত বাংলাদেশ গোয়েন্দা বিভাগের তেমনটাই দাবি। গ্লোবাল ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ জানিয়েছিল ভারত সরকারের কাছে। সেই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে গিয়েই ইডি জানতে পারে সুকুমার এপার বাংলায় বসে রীতিমত হাওয়ালার ব্যবসা করে চলেছে।
শুধু ব্যবসা করাই নয়, অশোকনগরের বুকে সে একাধিক দোকান ও বাড়ি তৈরি করে ফেলেছে। বাড়ি আছে কলকাতার বুকেও। এছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, অহমদাবাদ সহ দেশের একাধিক বড় শহরে রয়েছে সুকুমারের সম্পত্তি। কার্যত একই অবস্থা প্রণব কুমার হালদারেরও। তারও একাধিক বাড়ি আছে এ রাজ্যের কলকাতা, শিলিগুড়ি, অশোকনগর, আসানসোল, দূর্গাপুর শহরে। বাড়ি আছে দিল্লি ও মুম্বইয়েও। এই ঘটনার তদন্তে নেমে ইডি’র হাতে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। প্রণবের ভাই প্রশান্তও জড়িত হাওয়ালার ব্যবসায়। তারও সম্পত্তির পরিমাণ দাদার সমান। সেই তদন্তে নেমে ইডি শুক্রবার সকাল থেকে একযোগে হানা দেয় অশোকনগরে সুকুমার, প্রণব ও তাঁদের আরও এক সহযোগী স্বপন মিশ্রের বাড়িতে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া ও নদিয়া জেলাতেও বেশ কয়েক জায়গায় তল্লাশি অভিযান চলছে এদিন সকাল থেকেই। সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ৯টি জায়গায় এই তল্লাশি অভিযান চলছে।