নিজস্ব প্রতিনিধি: কাউকে না জানিয়ে ৫ কিশোর ও ৩ কিশোরী চলে গিয়েছিল ঘন জঙ্গলে। উদ্দেশ্য ছিল একটি ঝর্নাকে চাক্ষুষ করা। দুর্গম পাগাড়ি পথে পায়ে হেঁটে তারা সেখানে পৌঁছেও যায়। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ফেরার পথে। বৃষ্টির জেরে পাহাড়ি নদীতে নামে হড়পা বান। আর তাতেই নদী পার হতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ে ওই ৮জন। শেষে একটি বড় পাথরে আশ্রয় নিয়ে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচায় তারা। এই অবস্থাতেই বাড়িতে ফোন করে সব কথা জানাতে বিষয়টি নিয়ে অবগত হয় জেলা প্রশাসন। কার্যত তারপরেই রাতভর চলে রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান। শেষে ভোর রাতের দিকে নদীর জল নামার পরে ৮জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ, এনডিআরএফ ও দমকলের কর্মীরা। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং(Darjeeling) জেলার শিলিগুড়ি(Siliguri) মহকুমার মাটিগাড়া ব্লকের সেভক(Sevok) ফাঁড়ি এলাকায়।
জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি শহরের মিলনপল্লী(Milanpally) এলাকার ৫জন কিশোর ও ৩ জন কিশোরী কাউকে না জানিয়ে রবিবার সকালে চলে গিয়েছিল সেভকের জঙ্গলে। দুর্গম পাগাড়ি পথে পায়ে হেঁটে সেভক পেরিয়ে কালিখোলা এলাকায় তারা চলে যায় কমলা ফলস দেখতে যায়। সেই ঝর্ণা দেখে ফেরার পথেই তারা পড়ে বিপদের মুখে। পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির জন্য কালিখোলা(Kalikhola) নদীতে হুট করে হড়পা বান চলে আসে। আর সেই সময়েই ওই নদী পার হচ্ছিল ওই ৮জন। নদীর খরস্রোতে ভেসে যাওয়ার মুহুর্তে তারা কোনওরকমে একটি বড় পাথরের ওপরে উঠে নিজেদের জীবন বাঁচায়। সেই ঘটনা ঘতেছিল বিকাল বেলায়। নদীর জল চট করে না কমায় তারা সেখানেই আটকে পড়ে ও ফোন করে যে যার বাড়িতে বিষয়টি জানায়। যেহেতু তারা একই এলাকার বাসিন্দা সেহেতু মিলনপল্লী এলাকায় মুহুর্তের মধ্যে ভ্যের বাতাবরণ তৈরি হয়। খবর যায় প্রশাসনের কানে।
সন্ধ্যা বেলায় উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন জেলেও দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের তরফে দ্রুত উদ্ধারকাজে নামা হয়, খবর দেওয়া হয় এনডিআরএফ বাহিনী ও দমকলকেও। এরপর রাতেই শুরু হয় রোহমর্ষক উদ্ধার অভিযান। সেভক ফাঁড়ির পুলিশকর্মী ও স্থানীয় কিছু বাসিন্দার সাহায্যে নদীর পাড়েও পৌঁছে যায় পুলিশ, এনডিআরএফ ও দমকলের বাহিনী। কিন্তু কালিখোলা নদীতে তখনও হড়পা বানের ভালই স্রোত থাকায় রাতে আর নদী পার করতে পারেননি তাঁরা। ভোররাতের দিকে নদীর জল কমলে ওই ৮জনকে উদ্ধার করেন তাঁরা। সকালেই মধ্যেই তাদের ফিরিয়ে আনা হয় শিলিগুড়ি শহরের মিলনপল্লী এলাকায়। তবে জানা গিয়েছে সেই উদ্ধারকার্যের সময়ে অভিযান চালাতে গিয়ে আহত হন সেবক ফাঁড়ির সিভিক ভলান্টিয়ার রোশন রাই, প্রভাশ রাই এবং স্থানীয় কিছু যুবক। এরা যদি এদিন সময়মত না পৌছাতেন তবে এই কিশোর কিশোরীদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে আনা কার্যত মুশকিল ছিল বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা।