25ºc, Haze
Saturday, 1st April, 2023 6:32 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই খুনিরা ধরা পড়েছে রাজ্যের গোয়েন্দা বাহিনী সিআইডি’র আধিকারিকদের হাতে। আদালত তাদের জেল হেফাজতেও পাঠিয়েছে। কিন্তু পুরুলিয়ায়(Purulia) জোড়া খুনের(Double Murder) ঘটনায় সিআইডির তুলে ধরা তথ্যে ভরসা রাখছেন না নিহতদের পরিবার। তাঁদের দাবি হয় সিআইডি’র তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে না, নাহলে সিআইডি(CID) সথিক তথ্য দিচ্ছে না। মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য পিটিয়ে খুনের যে তত্ত্ব সিআইডি’র তরফে তুলে ধরা হচ্ছে তা সঠিক নয়। পুরুলিয়ায় বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনায় এমনই দাবি করল তাঁদের পরিবার। ফলে সিআইডি’র তদন্ত নিয়ে কিছুটা হলেও প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গিয়েছে। তবে নিহতদের পরিবারের তরফে এখনও সিবিআই(CBI) তদন্তের কোনও দাবি জানানো হয়নি।
গত শনিবার ৯ জুলাই রাতে পুরুলিয়া টাউন থানা এলাকার কানালি গ্রামে এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। রাত প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ চাষ মোড়ের পেট্রোল পাম্প থেকে মোটরবাইকে করে বাড়ি ফেরার পথে কানালি গ্রামের অদূরে ফাঁকা মাঠে আততায়ীদের হামলার মুখে পড়েন মদন পাণ্ডে(৬৫) ও তাঁর ছেলে কানাই পাণ্ডে(৩৫)। আততায়ীরা ধারাল অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করে বাবা ও ছেলেকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। পুলিশ(Police) ফাঁকা মাঠ থেকে বাবা ও ছেলের গুলিবিদ্ধ ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করলেও ঘটনাস্থল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল তাঁদের মোটরবাইক। এমনকি উধাও হয়ে যায় বাবা ও ছেলের মোবাইল ফোনও। পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ ছিল, ডাকাতির উদ্দেশ্যে খুনের ঘটনা হতে পারে এটি। মৃতেরা এলাকায় নির্বিবাদী মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ফলে এমন নিরীহ মানুষদের এই পরিণতিতে হতবাক হয়ে যান এলাকার সকলে।
সেই ঘটনার তদন্তেই রাজ্য সরকার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয়। আর তারপরে পরেই গ্রেফতার হয় ৩ দুষ্কৃতী। এরা হল মাণ্ডিল বেদ, মনই বেদ এবং দীনেশ বেদ। মাণ্ডিল আর মন সম্পর্কে ভাই। বানজারা সম্প্রদায়ভুক্ত ওই তিন জনেরই বাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে। শুক্রবার রাতে আসানসোলের চিত্তরঞ্জন এলাকা থেকে এই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে সিআইডি। ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেন সিআইডি’র আধিকারিকেরা। শনিবার পুরুলিয়া জেলা আদালতে এই ৩জনকে তোলা হলে ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি, ধৃতদের বিরুদ্ধে টিআই প্যারেডের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। এমনকি সিআইডি’র তরফে এটাও জানানো হয়েছে যে, মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য এদের খুন করা হয়েছে। সিআইডি’র দাবি, ঘটনার দিন এরা পেট্রোল পাম্প থেকে ফিরছিলেন। কেননা মদনবাবু ছিলেন ওই পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার ও তাঁর ছেলে কানাই ছিল সেখানকার কর্মী। তাঁদের কাছে মোটা টাকা পাওয়া যাবে এই সন্দেহেই হামলা চালায় ৩জন। বাড়ির কাছেই সেই হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার সময় তাঁরা চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেওয়ায় প্রথমে গুলি করে ও পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাঁদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
কিন্তু এদিন সিআইডি’র এই তত্ত্ব মানতে চাইছে না নিহতদের পরিবার। এই বিষয়ে মদনবাবুর বড় ছেলে রোহিণী পাণ্ডে জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনায় অন্য রহস্য রয়েছে। বড় রহস্য আছে। তাই আমি চাই এই খুনের ঘটনায় মূল পান্ডা যদি অন্য কেউ থাকে, তা হলে সে যেন ধরা পড়ে। তারও যেন উপযুক্ত শাস্তি হয়। এই বানজারারা ধরা পড়ায় আমি খুব একটা খুশি নই। কারণ, নিছক ছিনতাইয়ের ঘটনা হলে তাঁরা আমার বাবা আর ভাইকে লুট করার পর ছেড়ে দিত। এ রকম নির্মম ভাবে প্রাণে মারত না। এরা ভাড়াটে খুনিও হতে পারে। আমাদের এলাকায় এর আগে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। রাতে রাস্তায় চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কিন্তু কোনও দিন এভাবে খুনের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের মনে হচ্ছে সিআইডি হয় সঠিক তথ্য তুলে ধরছে না, নাহয় তাঁদের তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে না। এই ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলেই আমাদের মনে হচ্ছে। খুনের উদ্দেশ্য নিয়েই হামলা হয়েছিল।’ রোহিণীর এই বক্তব্যের সমর্থন জানিয়েছেন নিহত কানাইয়ের স্ত্রী মামনি পাণ্ডেও।