নিজস্ব প্রতিনিধি, ধূপগুড়ি: ওঁরা অসুর সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই দেবী দুর্গার মুখ দেখা বারণ। ঢাকের বোল পর্যন্ত শুনতে নেই। কিন্তু বহু প্রচীন সেই রীতির ক্রমেই বদল ঘটছে। বাড়ির ছোটরা বন্ধুদের সঙ্গে পুজো মণ্ডপে হাজির হচ্ছেই। এবার ডুয়ার্সের ক্যারন চা বাগানের একদল অসুর সম্প্রদায়ের মানুষও দেবীদুর্গার দর্শন করলেন প্রথমবার।
ডুয়ার্সের ক্যারন চা বাগানের ক্যারি লাইনে ৫৫টি অসুর সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের বসবাস। ওই পরিবারগুলির মোট ৩০ জন সদস্য সপ্তমীর সন্ধ্যায় ধূপগুড়ি আসেন পুজো দেখতে। প্রথমে তাঁদের বস্ত্র উপহার তুলে দেওয়া হয়। তারপর টোটো করে এলাকার বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা দেখানো হয়। প্রতিটি মণ্ডপেই তাঁদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এমন আপ্যায়ন পেয়ে আপ্লুত তাঁরাও। ক্যারন চা বাগানের বাসিন্দা মালতি অসুরের কথায়, ‘পুজো উদ্যোক্তাদের আপ্যায়নে আমরা দারুন খুশি। তবে পূর্ব পুরুষরা বলতেন দুর্গাপুজোয় অংশ না নিতে। কারণ ঠিক জানা নেই। ক্যারন চা বাগানেও পুজো হয়, কিন্তু আমরা কখনও প্রতিমার মুখ দর্শন করিনি।’ আর এক মহিলা অনিতা অসুর বলেন, ‘পুজোর সময় আমাদের ঘরের বাইকে বেরনো বারণ। এটাই রীতি। কিন্তু বর্তমানে বাড়ি ছোটরা সেই সব আর মানছে না। তাই ওদের প্যান্ডেলে নিয়ে যেতে বড়দেরও বেরতে হচ্ছে।’
চলতি মাসের ৮ তারিখ ক্যারন চা বাগানে শিশুদের নতুন বস্ত্র দিতে গিয়েছিল ‘প্রচেষ্টা’ নামে ধূপগুড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তখন বড়রাও মজা করে জামাকাপড় চান। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের শর্ত দেয়, এবছর প্রতিমা দর্শন করতে আসলে নতুন বস্ত্র তাঁদেরও দেওয়া হবে। তাতে রাজিও হয়ে যান চা বাগানের বাসিন্দারা। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধূপগুড়ি পুর-প্রশাসনের ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশ সিং, ধূপগুড়ি থানার আইসি সুজয় তুঙ্গা-সহ ক্যারন চা বাগানের বাসিন্দারা। অনুষ্ঠানের অতিথিরাই অসুর সম্প্রদায় ব্যক্তিদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন।