নিজস্ব প্রতিনিধি: টানা ১৭ ঘন্টা তিনি ছিলেন নিখোঁজ। আর তার নিখোঁজ হওয়ার জেরেই রাতভর দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি ঝাড়গ্রামবাসী। পাছে যদি ঘুমের মধ্যেই সে ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ভয়ে ভয়ে কার্যত রাত কাটিয়েছে ঝাড়গ্রাম শহর আর তার আশেপাশের গ্রামের মানুষেরা। শেষে জানা গেল, যাকে ঘিরে এত উদ্বেগ, এত ভয়, এত দুশ্চিন্তা, সেই তিনি কিনা নিজের ঘরেতেই ঘুমাচ্ছেন নাকটি ডেকে। আর এমন জায়গায় গিয়ে তিনি ঘুমাচ্ছেন যে চট করে কারও নজর পড়া ভার। আর তার জেরেই পড়েছিল রব, ‘হর্ষিণী হয়েছে নিখোঁজ’। নাহ এই হর্ষিণী কোনও সুন্দরী রমণী নন যে নিখোঁজ হয়ে সকলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই হর্ষিণী এক চিতাবাঘ। যার আছে দুইখানি শাবক। সেই শাবকদের খাঁচায় রেখেই তিনি হয়েছিলেন নিখোঁজ। আর তার জেরেই জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ঝাড়গ্রাম শহরের বুকে। কেননা হর্ষিণী নিখোঁজ হয়েছিল ঝাড়গ্রাম মিনি জু থেকে। এদিন সেই মিনি জু’তেই তাঁর খাঁচার অন্দরে সন্ধান মিলেছে তার। আর তাতেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন ঝাড়গ্রাম মিনি জু কর্তৃপক্ষের আধিকারিক থেকে বনদফতরের কর্তারা।
ঝাড়গ্রামবাসীর রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই আতঙ্ক ও ঘটনা এখনও ঝাড়গ্রামবাসীর পাশাপাশি বঙ্গবাসী ও পশুপ্রেমীদের কাছে রীতিমত টাটকা হয়ে রয়েছে। তার মাঝেই বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম মিনি জু থেকে হর্ষিণীর নিখোঁজের খবর কার্যত দাবানলের মতোই জঙ্গলমহল জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর তার জেরেই একদিকে ক্ষোভ আর অন্যদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলমহলের এই জেলায়। কেননা এই মিনি জু’র পাশেই রয়েছে জঙ্গল। সেই জঙ্গলে যদি হর্ষিণী একবার হারিয়ে যেত তাহলে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যেত কিনা তা নিয়ে রীতিমত সন্দেহ ছিল। সেই হর্ষিণী যদি পরে খাদ্যের অনুসন্ধানে লোকালয়ে গিয়ে যদি মানুষের ওপরে বা গবাদি পশুর ওপরে হামলা চালাতো তাহলে বনদফতরের আধিকারিকদের মুখ দেখানোর জায়গা থাকতো না। তবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের একটাই আশা ছিল যে, হর্ষিণীর যেহেতু দুটি শাবক রয়েছে তাই তাদের ছেড়ে সে খুব বেশি দূরে যাবে না। গেলেও সে ঠিকই ফিরে আসবে।
তবে সাবধানের মার নেই বলে গতকাল বিকাল থেকেই ঝাড়গ্রাম শহর ও আশেপাশের গ্রামগুলিতে মাইকিং করা শুরু করে দিয়েছিলেন বনদফতরের কর্মিরা। সবাইকে দ্রুত বাড়ি ফেরার ও রাতে বাড়ি থেকে না বার হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর তার জেরেই রাতারাতি ঝাড়গ্রামবাসী চলে গিয়েছিল আতঙ্কের ঘেরাটোপে। সব সময় তাদের মনে হচ্ছিল, এই বোধহয় দিল ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে। ঘরে বসে, দোর আটকে, জানলা লাগিয়েও কাটছিল না ভয়। সারারাত ঝাড়গ্রামবাসী জেগে থেকে চোখ আটকে রেখেছিল টিভির পর্দায়, যদি হর্ষিণী ধরা পড়ার খবর আসে। সেই খবর এল তবে সকাল গড়িয়ে। হর্ষিণী রয়েছে তাঁর খাঁচার অন্দরেই। রসিক জন সেকথা শুনে বলছে, বন্যরা বনেই সুন্দর আর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।