এই মুহূর্তে




জগদ্ধাত্রী পুজোয় আজও আসে রাজকীয় অনুদান, ঘোমটা দিয়ে জল সাজতে যান পুরুষেরা

নিজস্ব প্রতিনিধি: উমা গিয়ে এসে ছিলেন শ্যামা। সদ্য শ্যামাও ফিরে গিয়েছেন। এবার আসছেন জগতের ধাত্রী। জগৎকে ধরে রেখেছেন বলেই তিনি জগদ্ধাত্রী। বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা হয়েছিল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরে। জগদ্ধাত্রী যেন দেবী দুর্গারই কৈলাস থেকে দ্বিতীয়বার মর্ত্যে ফিরে আসা। কৃষ্ণনগরের মালো পাড়ায় ব্যতিক্রমীভাবে পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। মালো বলতে বোঝায় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে। তাঁরা যে জগদ্ধাত্রী পুজো করে সেই পুজো মা জলেশ্বরী‘-র পুজো নামেও পরিচিত। একশো বছর পেরিয়েও আজও সমানভাবে বহন করে চলেছে প্রাচীনত্বের ঐতিহ্য। এই কারণেই মালো পাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে উঠেছে অনন্য। 

মালো সম্প্রদায় মূলত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজবাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের দায়িত্ব পালন করত। একবার তাঁদের ইচ্ছা হল তাঁরাও দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করবেন। সে কথা রাজাকে জানালেন প্রজারা। প্রজাদের ইচ্ছা মেনে নেন মহারাজা নিজে। শুধু তাই নয়, পুজোর প্রচারের সহায়তা করেন। মালোপাড়ায় যাতে জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ১৫ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। সেই অনুদান দেওয়ার রেওয়াজ আজও বর্তমান। আজ কৃষ্ণচন্দ্র রাজা নেই, কিন্তু তার উত্তরসূরিরা তো রয়েছেন। তাই প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে রাজবাড়ী থেকে আসে প্রতীকি ১৫ টাকা। যতদিন পর্যন্ত না এই ১৫ টাকা আসে ততদিন পর্যন্ত পুজোর কাজ শুরু হয় না। রাজা এবং প্রজার মধ্যে সম্পর্কের মাধুর্য কতখানি সুন্দর হওয়া উচিত তাই যেন তুলে ধরে এই ঐতিহ্য।

মালোপাড়া জগদ্ধাত্রী পুজোর অন্যতম আকর্ষণ ধুনো পোড়ানো। যারা এই পুজো দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই এর আকর্ষণ সম্পর্কে জানেন। এই ধুনো পোড়ানো কিন্তু কোন রীতি নয়, আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে এক লোককাহিনী। শোনা যায়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র মৎস্যজীবীদের পাড়ায় একবার মায়ের দর্শনে এসেছিলেন। মহারাজা এসেছেন, এদিকে চারদিকে তীব্র আঁশটে গন্ধ। মহারাজা কিছু বলতেও পারছেন না, কিন্তু প্রবল অস্বস্তি হচ্ছে। তাই তাঁকে স্বস্তি দিতে পুজোর আয়োজকরা সেই সময় ধনো পুড়িয়ে আঁশটে গন্ধ দূর করার বন্দোবস্ত করেন। সেই শুরু তারপর থেকে রাজার প্রতি সম্মান জানাতে এবং পরিবেশকে বিশুদ্ধ রাখতে ধুনো পোড়ানোর চল রয়েছে। মানত পূরণ হলে মাথায় বা হাতে ধুনুচি রেখে অনেক সময় এক মন ধুনো পোড়ানো হয় এই পুজোয়

মা জলেশ্বরীর পুজো সব দিক থেকে অনন্য। এই পুজোর আরও এক ব্যতিক্রমী প্রথা হল দেবীর ঘট স্থাপনের জন্য পুরুষরা শাড়ি পড়ে নারী সেজে জলঙ্গি নদীতে যার জল ভরতে। কেউ কেউ বলেন যে ধর্মরাজই এখানে শিব। শিবের শরীর থেকেই তো নারীর সৃষ্টি হয়েছিল। তাই দেবাদিদেবকে তুষ্ট রাখতে ও নারী শক্তির প্রতি সম্মান জানাতে মালোপাড়ার মানুষেরা এই প্রথা চালু করেছিলেন। সেই জন্য আজও পাড়ার যুবকেরা মধ্যরাতে ঘোমটা মাথায় দিয়ে কাঁখে কলসি নিয়ে জল আনতে যান।

সব মিলিয়ে বলা যায় যে কৃষ্ণনগরে দেবী জলেশ্বরীর পুজো এক ইতিহাস ও সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল। সেই জন্যই রাজকীয় অনুদান ও ব্যতিক্রমী ঐতিহ্য মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে মালোপাড়ায়। 

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ডেঙ্গুর বলি ভাঙড়ের লাঙলপোতার মাজেদা বিবি, আইডি হাসপাতালে চিকি‍ৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

নবগ্রামে জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে হানা NIA’ র

SIR ফর্ম হাতে পাওয়ার পর নথি নিয়ে টেনশন, আত্মহত্যা টোটো চালকের!

পার্থের মুক্তি নিয়ে মুখ খুললেন ‘বান্ধবী’ অর্পিতা, কী বললেন?

সামশেরগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যু গাজিয়াবাদে

জাপানের ওকায়ামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট পেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ