নিজস্ব প্রতিনিধি: সম্প্রতি রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাওড়া পুরনিগম থেকে আলাদ করে বালিকে ফের পৃথক পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলা হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভায় এই বিষয়টি ইতিমধ্যেই অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে বিল আনা হতে চলেছে রাজ্য বিধানসভায়। আর এই সিদ্ধান্তের জেরেই এখন পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটিতেও জোরালো দাবি উঠে গিয়েছে যাতে ওই ৩ জনপদকেও যেন তার পৃথক পুরসভার মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সম্ভাবনা খুবই কম।
বাম জমানায় বালির মতোই জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটি পৃথক পৃথক পুরসভা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালের পরিবর্তনের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার বালিকে যেমন হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিল ঠিক তেমনি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটি পুরসভাকেও আসানসোল পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। এর জেরে ওই ৩ পুরসভার বাসিন্দাদের মধ্যেও বেশ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। কার্যত সেই সময় থেকেই ওই ৩ পুরসভা এলাকার বাসিন্দাদের দাবি রয়ে গিয়েছে যে আগের মতোই ওই তিন পুরএলাকাকে আসানসোল পুরনিগম থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলা হোক। এখন রাজ্য সরকার যখন বালিকে ফের হাওড়া পুরনিগম থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক পুরসভা হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছে তখন জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটিও জরালো দাবি উঠেছে যে সেখেনেও ওই ৩ শহরকে যেন আসানসোল পুরনিগম থেকে আলাদা করে আগের মতোই পৃথক পৃথক পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলা হয়।
তবে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটিতে যে দাবি উঠেছে তা মূলত বাম ও বিজেপির তোলা দাবি। তাই রাজনৈতিকগত ভাবে এই দাবি মানা হবে না। বালিকে হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার অন্যতম কারনই ছিল সেখানকার বামদুর্গকে চূর্ণ করে দেওয়া। যা কাজে তৃণমূল অনেকটাই সফল এমন কথা কিন্তু বলা যায় না। কেননা বালি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডকে ১৬টি ওয়ার্ডে পরিণত করে হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত করার পরে ২০১৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৭টি ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছিল। যদিও একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বালিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। ঠিক এই একই কারনে রানীগঞ্জ ও জামুড়িয়ার মতো বাম দুর্গকে ধূলিসাৎ করতে ওই দুই পুরসভাকে আসানসোল পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত করে দেয় রাজ্য সরকারকে। কুলটির ক্ষেত্রে অবশ্য উদ্দেশ্য ছিল শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কলহের রাশ টানা। কিন্তু তারপরেও দেখা যায় ২০১৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই ৩ পুরসভা এলাকাতেই ভালো ভোটের লিড পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু একুশে আবার কুলটিতে বিজেপি জেতে খুব কম ভোটের ব্যবধানে। আবার আসানসোল দক্ষিণ থেকেও জয়ী হয় বিজেপি। তবে রানীগঞ্জ ও জামুড়িয়ায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল।
এই অবস্থায় সামনের বছরেই জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে আসানসোল পুরনিগমের নির্বাচন হতে চলেছে। তার আগে বাম ও বিজেপির তরফে জোরদার দাবি তোলা হয়েছে যাতে জামুড়িয়া, রানীগঞ্জ ও কুলটিকে ফের পৃথক পুরসভায় রূপান্তরিত করে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূল সূত্রেই ইঙ্গিত মিলেছে এই রকম কিছু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। ওই ৩ শহর এখন আসানসোল পুরনিগমের মাধ্যমেই উন্নয়নের মুখ দেখবে।