নিজস্ব প্রতিনিধি: সন্তান মায়ের ওপর রাগ করতেই পারে, কিন্তু মা কী পারে সন্তানের থেকে দূরে সরে থাকতে। সেই মাতৃরূপী মমতাই এদিন ধরা দিলেন আমজনতার কাছে। বৃষ্টি হলেও আলিপুরদুয়ারের(Alipurduyar) তাপমাত্রা অনেকটাই বেশি। তার ওপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে শুরু করে। সেই তীব্র গরম উপেক্ষা করেই মমতার সভায় নেমেছিল জনতার ঢল। সেই সভা চলাকালীন সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৩জন। দ্রুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) দেখা যায় ভাষণ থামিয়ে তাঁদের সেবাযত্ন করতে। একই ভাবে সভাস্থল থেকে মালঙ্গি গেস্ট হাউসে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী চলে আসেন হাসিমারায়(Hasimara) কোদাল বস্তিতে। সেখানে গাড়ি থেকে নেমে সাধারন মানুষের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা যায় তাঁকে। আর মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে কাছে পেয়ে রীতিমত আপ্লুত আলিপুরদুয়ারবাসী।
মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরমের পরিমাণও বাড়তে শুরু করে। কিন্তু সেই তীব্র গরম উপেক্ষা করেই মমতার সভায় হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানান, মানুষ বেশি করে ভিড় জমিয়েছেন জানতে পেরে তিনি নিজেই সভাস্থলে তাড়াতাড়ি চলে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য চলার সময়েই সভায় আসা ৩জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। গরম সহ্য করতে না পেরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ৩জন। মূল মঞ্চের ডান দিকে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিল মুসকান পারভিন(Muskan Parveen) নামে এক কিশোরী। সেই ঘটনা চোখে পড়তেই দ্রুত নিজের বক্তব্য থামিয়ে এগিয়ে যান মমতা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘কী হয়েছে? অজ্ঞান হয়েছে? জল দাও। আমার কাছে জল আছে। আগে মুখে-চোখে জল দাও। ডাক্তার কে আছে, ডেকে নাও। মিটিং-মিছিল পরেও অনেক হবে। কিন্তু আগে ওই কিশোরীকে সুস্থ করতে হবে।’ এরপর তাকে জল খাইয়ে তার মাথায় ও গায়ে হাত বুলিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। পাশাপাশি মুসকানের চোখে মুখে জল দেওয়ার পরামর্শও দেন। জানা গিয়েছে, মুসকানের বাড়ি আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া এলাকায়। মুসকান ছাড়াও অসুস্থ হয়ে পড়েন আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর ব্লক উত্তর মসজিদ খানার বাসিন্দা নগেন্দ্র রায় ও কার্তিকা চা বাগান এলাকার বাসিন্দা আভা বারিক। তাঁদেরও দ্রুত ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রীকে এই ভূমিকায় দেখে অভিভূত আলিপুরদুয়ারবাসী।
আবার এই সভা থেকে ফেরার পথে আচমকাই হাসিমারায় কোদাল বস্তিতে(Kodal Basti) হাজির মুখ্যমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে কোদাল বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাদের অভাব অভিযোগের কথা শোনেন। জেলা সফরে গেলে প্রায়ই গাড়ি থেকে নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রীকে। সত্যি কথা বলতে কী এতাই মমতার সব থেকে বড় ইউএসপি, যা তাঁকে দেশের আর পাঁচজন নেতানেত্রী থেকে বার বার ফারাক করে দিয়েছে। এটাই মমতা ম্যাজিক। এই ম্যাজিকের টানেই মমতার দিকে লাখো মানুষ ছুটে আসেন। এদিন কোদাল বস্তিতেও গাড়ি থেকে নেমে বাচ্চাদের চকলেট, টফি দেন তিনি। কাউকে কাউকে আদরও করঅন। মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের নাগালে পেয়ে মুহুর্তে ভিড় জমে যায় বস্তিতে। সেই সময় উপস্থিত মহিলাদের মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন তাঁরা লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, জয় জোহর, বিধবা ভাতা, বার্ধক্যভাতা পেয়েছেন কিনা। বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দাই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারে তাদের মাসে হাজার টাকা আসার কথা। সেই টাকা তারা পাচ্ছেন কিনা তাও জিজ্ঞাসা করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান বস্তির বাচ্চারা ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কিনা। তাদের স্কুলের পোশাক বা খাবার দেওয়া হচ্ছে কিনা।