নিজস্ব প্রতিনিধি: গুণ্ডামি কাকে বলে সেটা আনিসকাণ্ডে বাংলাকে দেখাচ্ছে বামেরা। আর নাটক কাকে বলে সেটা বাংলার মানুষকে দেখাচ্ছে গেরুয়া। মানে বিজেপি। রবিবার ছিল রাজ্যের ১০৮ পুরসভায় নির্বাচন। অথচ গতকাল সারাদিন মাঠে দেখা মেলেনি কোনও গেরুয়া ব্রিগেডের কর্মী বা নেতাকে। অথচ পুরভোটে হাঙ্গামার অভিযোগ তুলে রবি সন্ধ্যায় এসি ঘরে বসে ১২ ঘন্টা বাংলা বন্ধ(Bangla Bandh) ডাকলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। যে দলের নেতা থেকে কর্মী, বিধায়ক থেকে সাংসদ দলের রাজ্য সভাপতিকেই বিশেষ পাত্তা দেন না সেই দলের কর্মিরা কী বন্ধ করবেন! আর বাংলার মানুষই বা কেন সেই বন্ধ সমর্থন করবেন? তাই যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। বাংলা জুড়ে সোম সকালে সজোরে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিজেপির(BJP) ডাকা বাংলা বন্ধ। কলকাতা থেকে হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া থেকে মালদা সর্বত্র জনজীবন স্বাভাবিক।
বিজেপি ডাকা বন্ধ যে মেনে নেওয়া হবে না সেটা রবি সন্ধ্যাতেই পরিষ্কার করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক এদিন সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। খোলা থাকছে সব সরকারি অফিস। এদিন সরকারি কর্মীরা কাজে যোগ না দিলে কাটা যাবে কর্মজীবনের একদিন। সচল রাখতে বলা হয়েছে সমস্ত রকমের গণপরিবহণ(Mass Transport)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ(Police) প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খোলা থাকছে স্কুল, কলেজ, বাজার, শপিং কমপ্লেক্স(Shopping Complex) এবং সবরকম জরুরি পরিষেবাও। আর এর জেরেই দেখা গেল কলকাতা(Kolkata) থেকে বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বনধের কার্যত কোনও প্রভাবই পড়েনি। কলকাতার বুকে আর পাঁচটা দিনের মতোই রাস্তায় নেমেছে সরকারি ও বেসরকারি বাস। রাস্তায় নেমেছে অটো, টোটো, রিক্সাও। চলছে মেট্রো রেল ও ট্রাম। হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদা স্টেশন ও কলকাতা স্টেশনেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। সেখান থেকে স্বাভাবিক ছন্দ মেনেই চলছে লোকাল ও এক্সপ্রেস ট্রেন।
তবে সব থেকে বড় চমক এদিন এসেছে আলিপুরদুয়ার জেলা থেকে। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার জেলায় বন্ধের কোনও প্রভাবই পড়েনি। খোলা রয়েছে বাজারহাট, দোকানপাট। চলছে সমস্ত রকমের যানবাহন। অথচ কোচবিহার শহরে কিছুটা হলেও পড়েছে বনধের প্রভাব। সেখানে বেশিরভাগ দোকানই এদিন বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় যানবাহন নেই বললেই চলে। রাস্তায় রাস্তায় পিকেটিং করছেন বিজেপি কর্মীরা। আটকানো হচ্ছে সরকারি বাস পরিষেবাও। তবে কোচবিহার জেলার অন্যত্র বন্ধের কোনও প্রভাব পড়েনি। এদিন সকাল সাতটা নাগাদ হুগলি স্টেশনে ডাউন বর্ধমান লোকাল আটকে দেয় বনধ সমর্থকরা। তবে দ্রুত ব্যান্ডেল থেকে রেল পুলিশ এসে অবরোধ সরিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। পরে হুগলি স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে বিক্ষোভ করে বিজেপি। হাওড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় বনধের কোনও প্রভাব না পড়লেও ব্যাঁটরা থানার খানপুর মোড়ে আজ সকালে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। হাওড়া-আমতা রোড অবরোধের চেষ্টা হয়। পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। সেই সময় পুলিসের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাঁকুড়ার ওন্দায় এদিন সকালে পথ অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। সকাল ৮টা নাগাদ ওন্দার বিজেপি বিধায়ক অমরনাথ সরকারের নেতৃত্বে রামসাগর এলাকায় ৭ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ হয়। প্রায় আধঘণ্টা চলে অবরোধ। ঘটনাস্থলে ছিল পুলিশও। পরে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নেন। এদিন সকালে বালুরঘাটে রাস্তায় বসে পড়ে বনধের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখান বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে সেই বিক্ষোভের তাঁরা বেশিক্ষণ টানতে পারেননি। কেননা পুলিশ দ্রুত এসে বিজেপি কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। আর তারপরেই দেখা যায় কার্যত হাতেগোনা কয়েকজন কর্মীকে নিয়েই রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সুকান্ত। অন্যদিকে জেলার তপনে রাস্তায় নেমে বনধ পালন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হলেন বিজেপির বিধায়ক বুদ্ধরাই টুডু। পুলিশ তাঁকে চ্যাঙদোলা করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এদিন সুকান্তর ডাকা বন্ধকে সফল করতে হাতেগোনা কিছু বিজেপি কর্মী সমর্থক ও নেতা বিধায়ক ছাড়া কার্যত কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। বিজেপি কর্মী থেকে সমর্থক, নেতা থেকে বিধায়ক-সাংসদ সকলেই যেন বিজেপির ডাকা বন্ধকে প্রত্যাখান করছেন। আমজনতাও এদিন বাড়ির বাইরে পা রেখে বন্ধকে প্রত্যাখান করার ডাক দিয়েছেন।