নিজস্ব প্রতিনিধি: মাঝে মধ্যেই ঘটনা ঘটছিল। দেখা যাচ্ছিল, একটি বাড়ির সদস্যরা বেলা গড়িয়ে গেলেও ঘুম থেকে উঠছিলেন না। অথচ সেই বাড়ি থেকে উধাও মূল্যবান সামগ্রী থেকে শোনার গয়না মায় টাকাপয়সাও। উধাও হয়ে যাচ্ছিল মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরার মতো জিনিস। চুরি যাচ্ছিল ডেস্কটপ কম্পিউটারও। শেষে প্রতিবেশীরা ওই সব বাড়ির মানুষদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তাঁদের সুস্থ করে তুলতেন। আর জ্ঞান ফিরে তাঁরা শুনতেন কীভাবে তাঁরা কার্যত সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন। এইরকম একআধটা ঘটনা নয়, বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছিল উত্তরবঙ্গের(North Bengal) জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) জেলার ময়নাগুড়ি(Moynaguri) থানা এলাকায়। শেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল সেই চুরি চক্রের(Theft Racket) মাথা সহ ২জন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কিছু ওষুধ, গুঁড়ো পাউডার ও রাসায়নিক তরল পদার্থ। প্রাথমিক ভাবে অনুমান করা হচ্ছে ওই সব জিনিস দিয়ে বাড়ির সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে চুরি করত ওই চক্রটি।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসে ময়নাগুড়ি থানার জোড়পাকড়ি এলাকার বাসিন্দা মৃদুল অধিকারীর বাড়ির লোকেরা রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন বেলা গড়িয়ে গেলেও ঘুম থেকে না ওঠায় প্রতিবেশীরা দেখেন বাড়ির দরজা খোলা। এরপর ঘরে ঢুকে অনেক ডাকাডাকি করলে বাড়ির এক সদস্য তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় উঠে বলেন, তার শরীর প্রচন্ড অসুস্থ। এরপর প্রতিবেশীরা দেখেন বাড়ির সকলে মিলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাদের বাড়ির আলমারি ভাঙা। এরপর তাদের সকলকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে জানা যায় তাদের বাড়িতে থাকা নগদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা, ল্যাপটপ, সোনার গহনা খোয়া গেছে। তারা সুস্থ হয়ে ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। কয়েকদিন আগে নির্দিষ্ট সুত্রের খবরের ভিত্তিতে জোড়পাকড়ি এলাকা থেকে তপন রায় নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ময়নাগুড়ি দক্ষিণ মৌয়ামারি এলাকার সোনা মহম্মদ নামে এক কবিরাজকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ক্লোনাজিপাম জাতীয় ডিপ্রেশনের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ সহ নানা ধরনের ডাস্ট পাউডার উদ্ধার করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। জেলার বিভিন্ন যায়গায় একই কায়দায় চুরি করার কথা জেরায় স্বীকার করেছে তারা।
এই সোনা মহম্মদ আদতে একজন ওঝা। সে বিভিন্ন বাড়িতে যেত সংসারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের অছিলায়। সেখানে বাড়িগুলিতে দুপুরের পর গিয়ে প্যাকেট করে ওষুধের গুঁড়ো দিয়ে বলত রান্নাঘরে হলুদ কিংবা লবনের পাত্রে এই গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে রাখতে এবং এই মিশ্রন দিয়ে রাতে রান্না করতে। এরপর ওই বাড়িতে নজর রাখতো সে। বাড়ির লোকেরা রান্না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে জানলা কিংবা দড়জা ভেঙে ঘরে ঢুকে চুরি করে পালাতো সোনা। কখনও ওই পরিকল্পনা সফল না হলে ওষুধ ও অন্যান্য কেমিক্যাল মিশিয়ে স্প্রে করে বাড়ির লোককে অচৈতন্য করে চুরি করতো সে।