নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে মুখ থুবড়ে পড়া। কিন্তু তারপর ঘুরে দাঁড়ানোর তো কোনও লক্ষ্যণই নেই, উল্টে প্রতিটি নির্বাচনে জমি হারানোর ছবি। ক্রমশই রাজ্যের প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। আর এসব দেখে এবার বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের দিকে কড়া কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা জানতে চেয়েছেন দলের এই ধারাবাহিক হারের কারণ কী? রাজ্যের বিরোধী দল হিসাবে উঠে এসেও এই সব নির্বাচনে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব কেন দ্বিতীয় স্থানও ধরে রাখতে পারছেন না? কেন দল তৃতীয় বা চতুর্থ হচ্ছে? কোন যুক্তিতে আর যাদুতে বামেরা বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে? ভোট প্রাপ্তির শতাংশই বা কমছে কেন? যদিও এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেওয়া এখন বঙ্গ বিজেপির নেতাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তাঁরা দলের তরফে করা পরিসংখ্যানমূলক গবেষণাকেই এখন এই সব প্রশ্নের উত্তর হিসাবে তুলে ধরছেন।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বাংলায় ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। সবকটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বিজেপি শুধু প্রতিটি ক্ষেত্রে হেরেছে তাই নয়, কিছু কিছু আসনে তাঁরা তৃতীয় বা চতুর্থও হয়েছে। একই সঙ্গে কলকাতা, বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল ও শিলিগুড়ি পুরনিগমেরও নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু কোথাও ভাল ফল করেনি বিজেপি। কলকাতায় তাঁরা আগের নির্বাচনে জেতা আসন ধরে রাখছে পারেনি। কার্যত সেখানে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে দলের আসন। চন্দননগর ও বিধাননগরে এবারেও খাতা খুলতে ব্যর্থ তাঁরা। আসানসোলে ও শিলিগুড়িতে তাঁরা খাতা খুললেও এক অঙ্কের সংখ্যাতেই আটকে গিয়েছে। তবে সর্বোপরি কলকাতায় ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বিজেপি যেমন বামেদের পিছনে পড়ে গিয়েছে, তেমনি চন্দননগর ও বিধাননগরেও তাঁরা ভোট প্রাপ্তির নিরিখে বামেদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এই ৩ পুরনিগমেই বিজেপিকে পিছনে ফেলে বামেরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। আসানসোল ও শিলিগুড়িতে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও বামেরা কার্যত সেখানে তাঁদের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে।
এই অবস্থায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সব থেকে বড় প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে, বামেরা রাজ্যের বিধানসভা থেকে মুছে গিয়েও কীভাবে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আর সেটাই কেন তাঁরা করে দেখাতে পারছেন না? এই পিছনে কী সাংগঠনিক দুর্বলতা কাজ করছে নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে। বাম কর্মীরা তৃণমূলের সামনে দাঁড়িয়ে যে লড়াই দিতে পারছে তা কেন দিতে পারছে না বিজেপির কর্মীরা? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে কার্যত ব্যর্থ বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। তবে দলের কর্মীরা মেনে নিচ্ছেন, নির্বাচনমুখী বঙ্গে আচমকা দলের সাংগঠনিক রদবদল মানতে পারেননি অনেকেই। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর যেখানে উচিত ছিল, কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধি করা, তাদের পাশে থাকা, সংগঠনের তৃণমূলীয় স্তরে নজর দেওয়া সেখানে কেবল দলের অন্দরের ক্ষোভই সামনে এসেছে। দলের উচ্চপদস্থ নেতা-বিধায়করা, সাংসদেরা একে একে হোয়াটস্যাপে যেভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন তার সরাসরি প্রভাব গিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে। ফলে, নেতৃত্বের উপরে আস্থা হারাতে শুরু করেছেন দলের কর্মীরাই। এছাড়া দলে আদি-নব্য কোন্দল তো রয়েছেই। একই সঙ্গে রাজ্য সরকার আমজনতার জন্য যে সব সামাজিক ও উন্নয়নমুখী প্রকল্প চালু করেছে তাতে শাসক দলের প্রতি বিশ্বাস বেড়েছে আমজনতার। বেড়েছে তাঁদের প্রতি সমর্থনও। বিজেপি সেখানে আমজনতার জন্য না কিছু করে দেখাতে পেরেছে না তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। তাই যা হওয়ার সেটাই হচ্ছে।