কৌশিক দে সরকার: নির্লজ্জ, বেহায়া, কানকাটা আর কাকে বলে! সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়, বাংলার মানুষের একের পর এক নির্বাচনী রায়, বাংলার বুক থেকে বামেদের মুছে যাওয়া, সর্বোপরি নিজের স্বপ্নের প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। এসব দেখেও শিক্ষা নেননি টাটা গোষ্টীর ‘চেয়ারম্যান এমিরেটাস’ রতন টাটা(Ratan Tata)। নিজের ভুল স্বীকার করা তো দূরের কথা, এখনও তিনি শুধু যে তাঁর স্বপ্নের ন্যানো(Nano) নিয়ে মজে রয়েছেন তাই নয়, কার্যত এখনও সময় আর সুযোগ পেলেই তিনি পরোক্ষ ভাবে আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রীকে। যদিও নাম না নিয়েই। আজ ১৩ মে। ১১ বছর আগে এই দিনেই বাংলার বুক থেকে ৩৪ বছরের বাম অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। আর তাঁর সেই ক্ষমতায় আসার অন্যতম অনুঘটক ছিল সিঙ্গুরের(Singur) জমি আন্দোলন যার সঙ্গে আবার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিলেন রতন টাটা ও তাঁর সাধের ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রকল্প তথা তাঁর কারখানা।
এই ঐতিহাসিক দিনের আগে বৃহস্পতিবার রাতে রতনবাবু ইস্টাগ্রামে তাঁর সাধের ন্যানো গাড়ি নিয়ে আবারও একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ন্যানোর দুঃখ তিনি আজও ভোলেননি এবং সেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার জন্য তিনি এখনও তাঁর পূর্ব ঘোষিত ‘ব্যাড এম’-কেই দায়ী করেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে রতনবাবুর বাস্তবটা দেখার মতো চোখ আর মন থাকলে নিজেই বুঝতে পারতেন ভুলটা ‘ব্যাড এম’-এর ছিল না। ভুলটা ছিল তাঁর নিজের এবং অবশ্যই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের। ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ শ্লোগান তোলা বাম শাসকেরা সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম দুই জায়গাতেই কৃষকদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পায়ের তলায় পিষে মেরে দিতে চেয়েছিল। তাঁদের জমি ছিনিয়ে নিয়ে গায়ের জোরে তা শিল্পপতিদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল শিল্পায়নের নামে। ৩৪ বছরে যারা কিছু করে দেখাতে পারেনি তাঁদের সেই শিল্পায়নের ভাঁওতাবাজি ধরে ফেলতে সময় নেননি সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম কী বাংলার মানুষ। তাই ২০১১-তে তাঁরা যে শুধু বামেদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছেন তাই নয়, ২০২১ সালে তাঁদের বাংলার বিধানসভা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছেন।
গরিবের জমি কেড়ে যে বড় লোকদের গাড়ি তৈরির কারখানা গড়া যায় না সেই সারসত্যটাই এখনও বুঝতে পারেননি রতন টাটা। আরও বলা ভাল জীবন শেষের লগ্নে এসেও নিজের ভুল বুঝতে চাইছেন না টাটাবাবু। শিল্প নিশ্চয় প্রয়োজন। কিন্তু তা বলে কৃষকদের ধ্বংস করে নয়। মমতার জমি আন্দোলন যদি সত্যিই খুব খুব ভুল হোত তাহলে না সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরে জমি ফেরতের ঐতিহাসিক রায় দিত না বাংলার মানুষ বার বার মমতার হাত শক্ত করার মতো নির্বাচনী রায় দিত। এই সার সত্যটা স্বীকার না করে টাটাবাবু এখনও ন্যানোর স্বপ্নে মেতে আছেন। দুর্ভাগ্য এখানেই।