নিজস্ব প্রতিনিধি: চিঠি এল রাজ্য সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা উন্নয়ন দফতরের তরফে। সেই চিঠি গ্রহণও করলেন উপাচার্য(VC)। আর তার পরে পরেই তিনি জানিয়ে দিলেন, চিঠির উত্তর তিনি অবশ্যই দেবেন। সেই সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে। নজরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য মহম্মদ আলি মণ্ডল(Muhammad Ali Mondol)। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গেই চূড়ান্ত অভব্য আচরণ করে গ্রেফতার হয়েছে ছাত্রনেতা গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল(Giyasuddin Mondol)। উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর অভব্য আচরণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ঘটনা ঘিরে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য রাজনীতি ও শিক্ষামহলে। এবার সেদিনের ঘটনা নিয়েই রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল রাজ্য সরকার। আর সেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হল রাজ্য সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা উন্নয়ন দফতরের তরফে। সূত্রে জানা গিয়েছে, চিঠি পাঠানো হলেও কোন তারিখের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ বলে দেওয়া হয়নি।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়(Aliah University) সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ পড়ুয়ার পিএইচডি-তে সুযোগ পাওয়া নিয়েই যাবতীয় ঝামেলার সূত্রপাত। গিয়াসুদ্দিন মণ্ডল ঘটনার দিন জনা ১৫-১৬ যুবককে নিয়ে সে দিন বোর্ড রুমের বাইরে উপাচার্য মহম্মদ আলি মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সেই ঘটনার ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে ভাইরাল হতেই রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঢেউ ওঠে। রবিবার পুলিশ উপাচার্য নিগ্রহের ঘটনায় গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতারও করে। যদিও গিয়াসুদ্দিনের অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত খোদ উপাচার্য। তিনিই পাঁচ পড়ুয়াকে অনৈতিক ভাবে পিএইচডি-তে সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বটে, কিন্তু প্রশ্নপত্র পেয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। এ নিয়েই তারা ‘প্রতিবাদ’ জানাতে উপাচার্যে ঘরে গিয়েছিল। যদিও তারা ভিডিও কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে এল তার কোনও জবাব দিতে পারেনি। অনেকেরই অনুমান নিজের দাপট দেখাতে গিয়ে গিয়াসুদ্দিন নিজেই ওই ঘটনার ভিডিও তোলার পাশাপাশি তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেয়।
এদিকে উপাচার্য এদিন রাজ্যের রিপোর্ট তলবের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে জানিয়েছেন, তিনি খুব শীঘ্রই ওই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবেন। যদিও তাঁর আর ইচ্ছা নেই উপাচার্য হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনাটি তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর পাশাপাশি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও বিস্তারিত ভাবে জানাবেন। যদিও গিয়াসুদ্দিন ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেও উপাচার্যকে ফের কাঠগড়ায় তুলেছে। গ্রেফতারির আগে সে যে বার্তা দিয়েছিল তা হল, ‘একজন শিক্ষিত ছাত্র হিসেবে এই ভাষা প্রয়োগ করা আমার উচিত হয়নি। আমি এর জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত। কিন্তু, আমি কী করব? আমার কেরিয়ারও তো নষ্ট করে দিয়েছেন এই ভিসি। আমায় বহিষ্কার করেছেন। আমায় পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে দুর্নীতির জন্য উপাচার্যই দায়ী। পিএইচডি অ্যাডমিশন নিতে গেলে রেট নামে একটা পরীক্ষা হয়। গত ৩০ তারিখ সেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোলে দেখা যায় এক শ্রেণীর ছাত্র, যাদের সঙ্গে পড়াশোনার কোনও সম্পর্ক নেই তাদের অ্যাডমিশন হয়ে গিয়েছে। এই সমস্ত ছাত্রদের প্রশ্ন আগে থেকে সাপ্লাই দিয়েছিলেন উপাচার্য। আমার প্রতিবাদের পদ্ধতি হয়ত ভুল ছিল, কিন্তু, দাবিটা সঠিক ছিল।’
মনে করা হচ্ছে এবার রাজ্য সরকারের তরফেও উপাচার্যকে এই ঘটনায় জিজ্ঞাসা করা হতে পারে। সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর এই নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিরও গঠন করতে পারে। সেক্ষেত্রে উপাচার্যকেও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হবে। গিয়াসুদ্দিনের দাবি কতখানি সঠিক সেটাও সামনে আসুক, এমনটাই চাইছে রাজ্য সরকারও।