নিজস্ব প্রতিনিধি: দ্রুত বদলাচ্ছে রাজনীতির রঙ। হারাচ্ছে আগেকার ঝাঁঝ। সুর ক্রমশই নরম হচ্ছে। তার জেরে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। এবার তাঁর দিকে ধেয়ে গিয়েছিল প্রশ্ন, আসানসোলের(Asansol) ঘটনার পিছনে তৃণমূলের(TMC) কী কোনও ষড়যন্ত্র ছিল? উত্তরে তিনি জানালেন, কোনও ষড়যন্ত্রই ছিল না। অর্থাৎ তিনি নিজেই তৃণমূলকে ক্লিনচিট দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন আসানসোলের ঘটনার জন্য তৃণমূল বিন্দুমাত্র দায়ী নন। তিনি শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari), যিনি উঠতে বসতে, সকাল সন্ধ্যায় তৃণমূলকে আক্রমণ শানান। যার আক্রমণের ঝাঁঝ থেকে বাদ পড়েন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। স্বাভাবিক ভাবেই এখন প্রশ্ন উঠছে শুভেন্দু হঠাৎ তৃণমূলকে নিয়ে সুর নরম করে দিলেন কেন? আসানসোলের ঘটনায় নিজের গ্রেফতারি এড়াতে নাকি নিখুঁত লেখা প্লটে প্রত্যাবর্তনের জমি তৈরি করতে? এই প্রশ্ন এখন ঘুরছে বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) অন্দরের পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতেও।
আরও পড়ুন বঙ্গ বিজেপিতে ক্রমশই একা হয়ে পড়ছেন শুভেন্দু
বুধবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল পুরনিগমের রামকৃষ্ণডাঙায় শিবচর্চা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন পুরনিগমের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির কাউন্সিলর চৈতালি তেওয়ারি। তিনি আবার আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি সেই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসার পরেই কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠান শুরু হয় এবং সেখানেই পদপিষ্ট হয়ে এক শিশুকন্যা সহ ৩জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আহত হন ৭জন। সেই ঘটনার জেরেই বঙ্গ বিজেপির একাংশ প্রকাশ্যেই আয়োজকদের পাশাপাশি শুভেন্দুকে আক্রমণ করা শুরু করেছেন। আরও বলা ভাল, শুভেন্দুই এখন তাঁদের আক্রমণের নিশানা হয়ে উঠেছেন। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো এদিন সোজাসুজি আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। বলেছেন, ‘দান খয়রাতের বিষয়টি মানবতার অপমান। গরীবদের সাহায্য করার আরও উপায় আছে। এই ধরণের কর্মসূচিতে যে ধরণের প্রস্তুতি লাগে শুধু পুলিশের উপর ভরসা করলে হয় না। নিজেদেরও ব্যবস্থা করতে হয়।’ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার উপায় নেই যে তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য শুভেন্দুই।
আরও পড়ুন তারিখ পে তারিখের রাজনীতি করি না, নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ দিলীপের
তবে বঙ্গ বিজেপির আরও এক প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা আসানসোলের ঘটনার জন্য তৃণমূলের চক্রান্তকে তুলে ধরেছেন। সেই বিষয়েই এদিন সাংবাদিকেরা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দুর দিকে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নাকচ করে দিয়ে শুভেন্দু জানান, ‘কোনও ষড়যন্ত্রের ঘটনাই ঘটেনি। অব্যবস্থার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। আয়োজকরা আরও বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক, সিভিক ভলেন্টিয়ার আর পুলিশের ব্যবস্থা রাখলে এই ঘটনা ঘটতো না।’ আর এখানেই প্রশ্ন, কেন তৃণমূলকে নিয়ে এতটা নরম হয়ে গেলেন শুভেন্দু? রাজ্য সরকার এই ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আর তার জেরে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন এই আশঙ্কা থেকেই তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর নরম করেছেন নাকি নিজে এবার বুঝতে পারছেন বঙ্গ বিজেপিতে ক্রমশ একা হ্যে কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছেন তিনি? সেক্ষেত্রে কতদিন তিনি বঙ্গ বিজেপিতে থাকতে পারবেন সেই প্রশ্নও কিন্তু উঠে গিয়েছে। তাই শুভেন্দুর সুর নরমকে অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ হিসাবেই দেখছেন। সেক্ষেত্রে পাল্টা আরও একটা প্রশ্ন ওঠে, যদি প্রত্যাবর্তনের পথেই শুভেন্দু হাঁটা দিয়ে থাকেন তো তৃণমূলের মুখপাত্র হিসাবে কুণাল ঘোষ কেন লাগাতার শুভেন্দুকে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন! সেটাও কী স্ক্রিপ্টেড? উত্তর আপাতত ভবিষ্যতের গর্ভে।