নিজস্ব প্রতিনিধি: ঠিক দুই বছর আগে জার্সি বদলে তিনি এসেছিলেন পদ্ম শিবিরে। এখন সেখানেই যেন ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন তিনি। পাশে কেউ নেই বললেই চলে। যারা প্রকাশ্য সভায় পাশে এসে বসে, তাঁরাই তাঁকে আক্রমণ শানাচ্ছেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বা মিডিয়ার সামনে। খালি চোখে অনেকের ধরা না পড়লেও দলের অন্দরে অনেকেই দেখতে ও বুঝতে পারছেন তিনি ঠিক কতটা একা হয়ে পড়ছেন। এক আধটা ঘটনা নয়, একের পর এক ঘটনায় সামনে চলে আসছে দলে তাঁর কোনঠাসা ও একা হয়ে যাওয়ার ঘটনা। আসানসোলের পদপৃষ্ট হয়ে ৩জনের মৃত্যুর ঘটনা সেই রিক্ত দশাইকেই যেন প্রকাশ্য দিবালোকে সামনে নিয়ে চলে এল। দলেরই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তাঁকেই ওই ঘটনার জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করে দিলেন। আর এসব কার্যত নীরবেই শুনে চলেছেন তিনি শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। বঙ্গ বিজেপিতে(Bengal BJP) তিনি এখন ক্রমশই একা হয়ে পড়ছেন, অন্তত এমনতাই দাবি বঙ্গ বিজেপির নেতাদের একাংশের।
আরও পড়ুন তৃণমূলকে হারিয়েও কদর পাননি দলে, পদত্যাগ একঝাঁক বিজেপি নেতার
বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh) শুভেন্দুকেই দায়ী করেছেন আসানসোলের ঘটনার জন্য। তৃণমূলেরও একই দাবি। যদিও ঘটনা হচ্ছে, শুভেন্দু মোটেই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিলেন না। আয়োজন ছিলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও তাঁর স্ত্রী চৈতালি তিওয়ারি। শুভেন্দু শুধু কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানের আগে সেখানে হওয়া দলীয়া সভায় যোগ দেন। তাহলে বঙ্গ বিজেপির একাংশ তাঁকেই কেন এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছে? আসলে সবটাই রাজনীতি। বঙ্গ বিজেপিতে শুভেন্দু ও তাঁর অনুগামীরা আসা ইস্তক দলের অনেক আদি নেতা ও কর্মীরা ব্রাত্য হয়ে পড়েন। দিলীপবাবু বঙ্গ বিজেপির সভাপতির পদ হারাতেই তাঁর অনুগামীরাও কোনঠাসা হয়েছেন। সুকান্ত মজুমদার সেই পদে থাকলেও তাঁর অনুগামীদের সেভাবে ভাল পদে বসাতে পারেননি। বঙ্গ বিজেপির অধিকাংশ পদে বিশেষ করে জেলার ক্ষেত্রে শুভান্দু অনুগামীদের দাপটই বেশি। এর পাশাপাশি শুভেন্দু এমন ভাবে কাজকর্ম করছেন, সভা অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, সব দেখে শুনে দল অপেক্ষা অনেক বেশি তিনি নিজে হাইলাইট হচ্ছিলেন। দল অপেক্ষা তিনি নিজে ভারী হয়ে উঠছিলেন। বঙ্গ বিজেপির অনেকেরই এই বিষয়গুলি না পসন্দ। সঙ্ঘের তো নয়ই।
আরও পড়ুন তারিখ পে তারিখের রাজনীতি করি না, নাম না করে শুভেন্দুকে কটাক্ষ দিলীপের
এই অবস্থায় বঙ্গ বিজেপির শুভেন্দু বিরোধীরা ক্রমশ এককাট্টা হচ্ছেন। আর তার জেরেই দলে ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন শুভেন্দু। আসানসোলের ঘটনার উদ্যোক্তা বা আয়োজক তিনি নন এটা জেলেও দলেরই নেতারা তাঁকে আক্রমণ করছেন, তাঁকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করে কাঠগড়ায় তুলছেন এটা কোনও সাধারন ঘটনা নয়। শুভেন্দু নিজে যেভাবে বঙ্গ বিজেপির একাংশকে আক্রমণ শানিয়েছেন সেই পথে হেঁটেই এখন তাঁকেই পাল্টা আক্রমণ করছেন বিজেপির একাংশের নেতারাই। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ বা চার দেওয়ার মধ্যে। ফলে শুভেন্দুর পাশে দাঁড়ানো নেতা বলতে এই মুহুর্তে কেউই নেই বঙ্গ বিজেপিতে। সঙ্ঘও তাঁর পাশে নেই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই ভাবে কতদিন একার জোরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবেন শুভেন্দু? নাকি হার মানবেন? দলের অন্দরে এই কোনঠাসা দশা ঘোচাবেনই বা কীভাবে? অনেক প্রশ্নই এখন তাঁকে ঘিরে ধরেছে। কথায় বলে, হাতি পাঁকে পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে। শুভেন্দুর যেন এখন সেই দশাই চলেছে।