নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশে গত ১৯ এপ্রিল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভোটগ্রহণের পালা। এদিন সেই নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে দেশের ৯৩টি লোকসভা কেন্দ্রে। এর মাধ্যে বাংলার ৪টি লোকসভা কেন্দ্রও রয়েছে যেখানে এদিন সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। সেই ৪ কেন্দ্র হল মালদা উত্তর ও দক্ষিণ, জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ। এদের মধ্যে সব থেকে নজর কাড়া কেন্দ্র হিসাবে উঠে আসছে মুর্শিদাবাদ(Murshidabad Constituency)। নজর কাড়ছে পাশের জঙ্গিপুর কেন্দ্রও(Jangipur Constituency)। এর নেপথ্যে কাজ করছে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক। কেননা উনিশের লোকসভা ভোটে এই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কাঁধে ভর দিয়েই তৃণমূল(TMC) অতিবড় মোদি ঝড়ের মধ্যেও জিতে নিয়েছিল জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ। শুধু উনিশের ভোটেই নয়, একুশের ভোটেও এই দুই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল জিতে নিয়েছে ১২টি বিধানসভা কেন্দ্র। এবারে সেই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে(Minority Vote Bank) থাবা বসাতে বাম-কংগ্রেস শুধু যে জোট গড়েছে তাই নয়, তলে তলে বিজেপির সঙ্গেও আঁতাত গড়ে তুলেছে। কিন্তু এদিন সেই সব ঘোঁটকে উপেক্ষা করে তৃণমূলকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে দুটি আসনই ধরে রাখার ক্ষেত্রে। আর সেই আত্মবিশ্বাসের মূলে রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মী ভাণ্ডারের(Lakshmir Bhandar) উপভোক্তারা।
এদিন সকাল থেকে কিছুটা ধীর গতিতেই ভোট পড়া শুধু হয়ে জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে। প্রথম দুই ঘন্টায় মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৪.৮৭ শতাংশ। সেখানে জঙ্গিপুরে প্রথম ২ ঘন্টায় প্রদত্ত ভোটের হার ছিল ১৬.৯৫ শতাংশ। বেলা ১১টার সময় এই দুই কেন্দ্রে ভোটের হার দাঁড়ায় মুর্শিদাবাদে ৩২.৭২ শতাংশ ও জঙ্গিপুরে ৩৩.৮১ শতাংশ। বেলা ১টায় সেই হার গিয়ে দাঁড়ায় মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে ৫০.৫৮ শতাংশ এবং জঙ্গিপুরের ক্ষেত্রে ৪৯.৯১ শতাংশ। অর্থাৎ বেলা ১টার মধ্যে ২ কেন্দ্রেই প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ তাঁদের ভোট দিয়ে দেন। দুপুর ৩টের সময় এই হার দিয়ে দাঁড়ায় মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে ৬৫.৪০ শতাংশ এবং জঙ্গিপুরের ক্ষেত্রে ৬২.৫৭ শতাংশ। ভোটপ্রদানের এই হার দেখে গেরুয়ায় শিবিরের অভিমত কার্যত এই দুই লোকসভা কেন্দ্রেই এবার লড়াই হচ্ছে তৃণমূল বনাম বাম-কংগ্রেস জোটের। বিজেপি এখানে ভোট কাটার ভূমিকায় থাকলেও খুব একটা রেখাপাত করতে পারবে না। মুর্শিদাবাদের বাম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম আবার জানিয়েছেন, ‘তৃণমূলের খেলা শেষ। তৃণমূল আর মাঠে নেই। মানুষের রায়ে গণতান্ত্রিক ভাবে ওরা বাতিল হবে, এটা বুঝে গিয়েছে। ওদের ভোট কারচুপির খেলা শেষ। তাই আমরাই একটু খেলছি।’
তবে তৃণমূলও পাল্টা কটাক্ষ হেনেছেন। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রেরই তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের দাবি, ‘সেলিম সাহেব একটু বেশিই খেলে ফেললেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুন্ডাগিরির কোনও জায়গা নেই। উনি ভুলে গিয়েছেন বাংলায় লক্ষ্মীর ভান্ডার বলে একটা প্রকল্প আছে।’ আবু তাহের খান এর বেশি কিছু বলতে না চাইলেও তৃণমূলের শিবিরে উঁকি মেরে জ্জানা গেল, মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর, এই দুই আসন ধরে রাখার ক্ষেত্রে তৃণমূলের বড় বল ভরসার স্থল লক্ষ্মীর ভান্ডার। কেন? কেননা এই দুই কেন্দ্রে মোট ভোটার প্রায় ৩৬ লক্ষ ৮৮ হাজার। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১৮ লক্ষ ১১ হাজার। এই মহিলাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মী ভাণ্ডারের উপভোক্তা। এরা প্রত্যেকেই এখন মাসে নূন্যতম ১০০০ টাকা করে পান। কেউ কেউ পান ১২০০ টাকা করে। তৃণমূলের সরকার ধাক্কা খেলে এই টাকা দেওয়ার যে কেউ থাকবে না সেটা তাঁরা বিলক্ষণ জানেন। আর তাই তাঁরাও জেনে শুনে তৃণমূলকে বিপদে ফেলবেন না। জোড়াফুল শিবির আশাবাদী, দুই লোকসভা কেন্দ্রেই তাঁরা এই মহিলা ভোটারদের কাঁধে চড়েই ৩ লক্ষের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবে। বিরোধীরা যতই এই দুই কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে আইএসএফ-কে মাঠে নামাক, কী বিজেপির সঙ্গে গোপন আঁতাত গড়ুক, কী সেলিমকে ভোট দেওয়ার আর্জি জানান, কিছুতেই কিছু হবে না। তৃণমূলকে ধরে রাখবে সেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের উপভোক্তারাই।