নিজস্ব প্রতিনিধি: এক আধবার নয়, টানা ৩ বারের সাংসদ শতাব্দী রায়। রাজ্যের শাসক দল এবারেও তাঁকে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র বীরভূম থেকেই টিকিট দেয়েছে। সেই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের(Birbhum Constituency) মধ্যে থাকা রামপুরহাট বিধানসভা(Rampurhat Assembly) কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে একটি গ্রাম, যার নাম কুসুম্বা(Kusumba Village)। এই গ্রামটির নাম এখন বাংলার অনেক মানুষের কাছেই বেশ পরিচিত হয়ে গিয়েছে। কেননা এই গ্রামের জন্মেছেন বাংলার অগ্নিকন্যা তথা মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। এই কুসুম্বা গ্রামেই তাঁর মামার বাড়ি। কিন্তু উনিশের লোকসভা নির্বাচনে এই গ্রাম থেকেই লিড তুলেছিল বিজেপি। এমনকি একুশের বিধানসভা নির্বাচনেও এই গ্রাম থেকে ভোট প্রাপ্তির হারে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি(BJP)। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও গ্রামের ৩টি বুথের মধ্যে ২টি বুথে জেতে পদ্মশিবির। অর্থাৎ মমতার জন্মস্থানেই এখনও সেখানকার বাসিন্দাদের মন জয় করতে পারেনি মমতার হাতে গড়া দল তৃণমূল(TMC)। কিন্তু এবারে, এই গ্রাম থেকেই লিড তুলতে ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল।
বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কুসুম্বা বরাবরই বাম দুর্গ ছিল। মমতা যখন কংগ্রেসে ছিলেন তখনও এই গ্রাম বামপন্থীদের দুর্গ ছিল, আবার মমতা যখন তৃণমূল গড়েন তখনও এই গ্রাম বামেদের দখলেই ছিল। এমনকি রাজ্যের বুকে ২০১১ সালে পরিবর্তন ধেয়ে এলেও কুসুম্বা থেকে গিয়েছে বামদুর্গ হিসাবেই। কিন্তু সেই গ্রাম থেকেই উনিশের ভোটে ৩ হাজারেরও বেশি ভোটে লিড তুলেছিল বিজেপি। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কুসুম্বার বেশিরভাগ বাসিন্দাই গোঁড়া ও কট্টর তৃণমূল বিরোধী। তাই তাঁদের মনে হয়েছিল, তাঁদের ভালবাসার দল, প্রাণের দল, বামেদের হারিয়ে যে মমতা বাংলার ক্ষমতা দখল করেছে, সেই মমতার দল তৃণমূলকে হারানোর ক্ষমতা রাখে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। তাই উনিশের লোকসভা ভোটে কুসুন্বা গ্রামের অন্ধ মমতা বিরোধীরা ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে। তাতেই সেই গ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ভোটের লিড তুলেছিল বিজেপি। এমনকি সেই নির্বাচনে রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্রেও লিড তুলেছিল পদ্মশিবির। একুশের ভোটে অবশ্য রামপুরহাট বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ফের তৃণমূলই জয়ী হয়। কিন্তু কুসুম্বায় তখনও লিড ধরে রাখে বিজেপি। যদিও সেই লিডের পরিমাণ কনে দাঁড়ায় ২১০০ ভোটের।
গতবছরে হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কুসুম্বা গ্রামের ৩টি বুথের মধ্যে ২টিতে জেতে বিজেপি। এমনকি সেখানকার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর মামাতো ভাই তথা দলের রামপুরহাট-১ ব্লক সভাপতি নীহার মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী পম্পা মুখোপাধ্যায় বিজেপির সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু এবার সেই কুসুম্বায় বিজেপিকে পিছনে ফেলে লিড তুলতে ঝাঁপাচ্ছে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে পিছিয়ে থাকা এলাকায় ক্ষোভ মেটানোর পাশাপাশি নানা টিমে ভাগ হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন তাঁরা। দিনদুয়েক আগে সাঁইথিয়ার জনসভা থেকে কুসুম্বা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন মমতা। এবার সেই গ্রামে পিছিয়ে থাকার তকমা তাই ঘোচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয়, ব্লক ও জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই লক্ষ্য পূরণের জন্য, সেখানে তৃণমূলের অন্দরে বুথভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জয়ের টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি ভাগ করে টিম তৈরি করে মনিটারিং করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ও কর্মীরা। দেখার বিষয়, বাম ছেড়ে আছা রামের ভোটাররা এবারেও রামের ঝুলিতেই থাকেন নাকি তাঁরা বামে ফেরত যান, নাকি রাম-বাম ছেড়ে ঘাসফুলকে আঁকড়ে ধরেন তাঁরা!