নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রামের বাসিন্দা ১৪ হাজার। অথচ তাঁদের জন্য রেশনের দোকান বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১টি। আর তার জেরে অধিকাংশ দিনই রেশন দোকান থেকে গ্রামবাসীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ডিউ স্লিপ(Due Slip)। আর দিনের পর দিন ধরে এই ঘটনা চলতে থাকায় এবার ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা নেমে এলেন রাস্তা অবরোধে। শনিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি(Jalpaiguri) জেলার ধূপগুড়ি(Dhupguri) ব্লকের শালবাড়ি জুড়াপানি এলাকায়। এদিন তাঁরা ধূপগুড়ি থেকে ফালাকাটাগামী ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। দীর্ঘক্ষণ অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কের দুইধারেই যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে আশ্বস্ত করলে অবরোধ তুল নেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু ১৪ হাজার গ্রামবাসীর জন্য মাত্র ১টি রেশন দোকান(Ration Shop) থাকায় এখন বিষয়টি নিয়ে বড়সড় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে জেলা প্রশাসন। আর এই ঘটনাকে সামনে রেখে বিজেপি তরফে আবারও পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য গঠনের দাবি তোলা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ধূপগুড়ি ব্লকের শালবাড়ি(Shalbari) গ্রাম পঞ্চায়েতের জুড়াপানি এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রামে যখন রেশন দোকান খুলেছিল তখন এই গ্রামের বাসিন্দা ছিল ৭ হাজারের সামান্য বেশি। আর সেটাও বছর কুড়ি আগে। এই দুই দশকে ওই গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে গয়েছে দ্বিগুণ। অথচ রেশন দোকান ১টিই রয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় অধিকাংশ দিনই গ্রামের লোকেরা রেশন দোকানে সামগ্রী নিতে গেলে তাঁদের হাতে ডিউ স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। কেননা ওই দোকানে ওত সামগ্রীই থাকে না। সরকার থেকেও ওত সামগ্রী পাঠানো হয় না। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, রেশন দোকানে গেলে তাঁদের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর হাতে ডিউ স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই ডিউ স্লিপের সামগ্রী আর কোনও দিনও পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই অব্যাবস্থার শিকার হয়ে ক্ষিপ্ত গ্রাহকেরা এদিন ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
এদিন বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, এই অব্যাবস্থা দূর হোক। তাঁদের এলাকার জন্য আরও কয়েকটি নতুন রেশন দোকান খোলা হোক। বিক্ষোভকারীদের আরও অভিযোগ রেশন দোকান থেকে সময়মত খাদ্য সামগ্রী প্রদান করা হয় না। এমনকি দুয়ারে রেশনও ঠিক করে দেওয়া হয় না। অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয় বলেও এদিন অভিযোগ তোলেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীরা এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘গ্রামে আরও রেশন দোকান খুলতে হবে। আতপ চাল এখানকার কেউ খায় না। তাই রেশন দোকান থেকে আতপ চাল দেওয়া বন্ধ করতে হবে। এরপরও যদি ঠিকমত রেশন না দেওয়া হয় তাহলে তাঁরা জেলা খাদ্যদফতরে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন।’ তবে এদিনের ঘটনার পরে পরেই ওই রেশন দোকানের ডিলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই বিষয়ে ধূপগুড়ির খাদ্য আধিকারিক মানিক দাস জানিয়েছেন, তিনি ওই দোকান থেকে ঘুরে এসে ডিলারকে সাসপেন্ড করেছেন। গ্রাহকদের রেশন সামগ্রীর জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছন। কিন্তু এই ঘটনাকে হাতিয়ার করেই এখন রে রে করে মাঠে নেমে পড়েছে গেরুয়া ব্রিগেড। তাঁদের দাবি, উত্তরবঙ্গের মানুষ যে বঞ্চিত এই ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। ১৪ হাজার লোক গ্রামে বাস করে অথচ তাঁদের জন্য মাত্র ১টি রেশন দোকান। বঞ্চনা না থাকলে এটা কখনই হত না। উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দিলে তবেই এই বঞ্চনার অবসান হবে বলেও দাবি গেরুয়া শিবিরের।