নিজস্ব প্রতিনিধি: নতুন বছরে নতুন ভাবনায় বাজিমাৎ করতে চাইছে ভারতীয় রেল। অনেকটা নতুন বোতলে পুরোনো মদের ঠিক উল্টো। এখানে পুরোনো রেলের কামরা নতুনরূপে এনে তাতে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যেই এই ধরণের কয়েকটি আপগ্রেড করে ফেলবে রেল মন্ত্রক। ফলে একদিকে যেমন আরও আকর্ষণীয় হতে চলেছে রেলযাত্রা। তেমনই পণ্য পরিবহণ আরও আধুনিক করে বাজার ধরতে পারবে দেশের প্রধান গণপরিবহণ সংস্থা। সেই দিক থেকে নতুন বছর ভারতীয় রেলের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
২০২১ সালে করোনা আবহের মধ্যেই নতুন নতুন যাত্রীবাহী কোচ এনে চমক দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে অন্যতম নতুন এসি থ্রি-টিয়ার ইকোনমি ক্লাস। পাশাপাশি অত্যাধুনিক তেজস রেক বা কামরা এনে রাজধানী এক্সপ্রেসগুলি চালানো হচ্ছে। আরও নতুন বন্দেভারত এক্সপ্রেস বা ট্রেন-১৮ সেট আনা হচ্ছে। এরফলে বহু পুরোনো কোচ বাতিল হচ্ছে। এখন কী হবে পুরোনো কোচগুলির। রেল জানাচ্ছে, বাতিল পুরোনো রেকগুলিই নতুন আঙ্গিকে কাজে লাগানো হবে। যার কিছু নমুমা ইতিমধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। যেমন, পুরোনো যাত্রীবাহী কামরাগুলিকে বিশেষ ধরনের মালবাহী কামরায় পরিবর্তন করা হচ্ছে। যার পোশাকি নাম এনএমজি রেক (Newly Modified Goods Rake)। ইতিমধ্যেই ভোপালে এমন ২৫টি পুরনো কামরার মডিফিকেশন হয়ে গিয়েছে। এই ধরণের কামরাগুলিতে নতুন মোটরবাইক, ছোট চারচাকা গাড়ি কারখানা থেকে দেশের অন্যপ্রান্তে পাঠানো যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে।
রেলের দাবি, সড়কপথের তুলনায় এই কামরায় ট্রেনে করে অনেক দ্রুত এগুলি পরিবহণ করা সম্ভব। কারণ এই আইসিএফ কামরাগুলি ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা ছুটতে পারে। বর্তমানে রেলের মূল পণ্য পরিবহণ বলতে শুধুমাত্র খনিজ, রাসায়নিক, সার, খাদ্যশস্য, শিল্পের যন্ত্রাদি। কিন্তু এর বাইরেও অটোমোবাইল বহনের একটি বড় বাজার রয়েছে ভারতে। শুধুমাত্র যে ব্যক্তিগত যানবাহনের কথা বলা হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। কারখানায় উত্পাদিত যানবাহন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাঠানো হয়। সেই বাজারটাই ধরে ফেলতে চায় রেল। এর জন্যই পুরোনো কামরাগুলিকে পণ্য বহণের উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি খুবই প্রচলিত। অনেকসময়ে ২-৩টি তলা করে এগুলি বানানো হয়। তাতে সারি সারিভাবে গাড়ি রাখা যায়।
রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত ও কম খরচে যদি নতুন যানবাহন পৌঁছে দেওয়া যায়। বলাই বাহুল্য, সড়কপথের তুলনায় এতে সময় এবং খরচ অনেক কম হবে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই কেরালার পালাক্কড় থেকে ৬৯০টি পাওয়ার টিলার অসমের ঘোগরাপুরে পৌঁছে দিয়েছে রেল। তার কয়েক মাস আগে মহীশূর থেকে হাওড়ার সাঁকরাইলে ১,১০০ টি মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই বিশেষ কামরায়। গত বছরেও এভাবে ট্রেনে করে বহু গাড়ি স্থানান্তর করেছে মারুতি সুজুকি। আবার পুরোনো শীততাপ নিয়ন্ত্রতি আইসিএফ কামরায় চকলেট ও ডেয়ারি সামগ্রী গোয়া থেকে দিল্লিতে পাঠিয়ে চমক দিয়েছিল রেল। তাই পুরোনো কামরা নষ্ট না করে এবার নতুন রূপে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় রেল।