নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের(Partha Chattopadhay) বাড়ি থেকে কোনও টাকাপয়সা উদ্ধার হয়নি। কিন্তু প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের(Arpita Mukhopadhay) বাড়ি থেকে। দুইজনই আপাতত ইডি’র হেফাজতে রয়েছেন। পার্থ’র বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধার না হলেও প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে ১৫-১৬টি কোম্পানির দস্তাবেজ রয়েছে আর বেশ কিছু জমি ও বাড়ির দলিল মিলেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মালিক হয় অর্পিতা না হয় পার্থ ও অর্পিতা দুজনই। ইডির আধিকারিকদের ধারনা যে ১২০ কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার কথা শোনা যাচ্ছে তার সব টাকা এসএসসি’র দুর্নীতি থেকে আসেনি। সেখানে কয়লা ও গরু পাচারের টাকাও আছে যা নানা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হত। সেই সূত্রেই তাঁদের নজর পড়েছে রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিকের ওপর যার প্রায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল পার্থ’র বাড়িতে। প্রাক্তন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় ২০ বছরের।
সন্দেহ কেন? ইডি আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, জেলা থেকে পার্থ’র কাছে যে টাকা আসত তা রীতিমত পুলিশি নিরাপত্তায় নাকতলা অবধি চলে আসত। আর এই বিষয়টি দেখভাল করতেন পার্থ ঘনিষ্ঠ ওই পুলিশ আধিকারিক। ইডি(ED) আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, জেলা থেকে পার্থ’র কাছে টাকা আসত ‘পুলিশ’ লেখা গাড়িতে। রীতিমত ‘গ্রিন করিডর’ বানিয়ে নিরাপদে গাড়িগুলি পৌঁছে দেওয়া হতো কলকাতায় নাকতলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। ওই সব গাড়ি সমস্ত নাকা চেকিং, টোল প্লাজা যাতে নির্বিঘ্নে পার হয়ে যায় তা দেখার দায়িত্বে থাকতেন পার্থ ঘনিষ্ঠ ওই পুলিশ আধিকারিক। কীভাবে টাকা তোলা হত, কোন কোন ক্ষেত্র থেকে সেই টাকা তোলা হতো সেই সব খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ওই পুলিশ আধিকারিকের(Police Officer) গতিবিধিও এখন ইডির নজরে রয়েছে। তাঁর মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস পরীক্ষার পাশাপাশি তাঁর ব্যাঙ্ক ডিটেলস, সম্পত্তি, আত্মীয়স্বজনদের আর্থিক অবস্থা, তাঁদের কয়জন সরকারি চাকরি পেয়েছেন ২০১১ সালের পরে, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ এসবই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করে বিশেষ তথ্য না পাওয়া গেলেও অর্পিতা অনেকটাই সাহায্য করেছে এক্ষেত্রে। সে ইডি আধিকারিকদের জানিয়েছে, এসএসসি(SSC)-র নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ামাত্র বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় হয়ে উঠত ‘এজেন্ট’রা। এমনকী শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতানেত্রী পর্যন্ত সেই কাজ করেছেন। চাকরিপ্রার্থীকে খোঁজা থেকে দরদাম, টাকা সংগ্রহ—সব কিছু করত এই তাঁরা। পার্থবাবুর নির্দেশমতো ওই সব এজেন্টরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ওই পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে। পার্থবাবুর সঙ্গে ওই পুলিশ আধিকারিকের দীর্ঘ ফোনালাপের তথ্য ইডির হাতে এসেছে। পার্থর নিরাপত্তা রক্ষীদের মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস পরীক্ষা করে ইডির আধিকারিকেরা জানতে পেরছেন যে, কেউ যাতে ঘুণাক্ষরে এই যোগাযোগের বিষয়টি জানতে না পারে তার জন্য দুইজনই পার্থর নিরাপত্তারক্ষীদের ফোনের মাধ্যমেই লেনদেনের কথাবার্তা বলত। টাকার ব্যাগ ভর্তি গাড়ি জেলা থেকে প্রথমে পৌঁছত পার্থর নাকতলার বাড়িতে। সেখানে চলত নোট গোনার কাজ। তারপর খামবন্দি হয়ে সেই টাকা চলে যেত অর্পিতার ফ্ল্যাটে। সেই অর্পিতা ইডি আধিকারিকদের এতাও জানিয়েছে, ওই পুলিশ আধিকারিক, টেট ও নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও মাথা গলিয়েছেন। বিভিন্ন প্রার্থীর জন্য পার্থর কাছে তিনি সুপারিশ করেছেন। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন চাকরিও পেয়েছেন। অর্পিতার এই দাবিদাওয়া কতখানি সত্যি সেটা যেমন ইডি আধিকারিকেরা খতিয়ে দেখছেন তেমনি কার কারা এভাবে চাকরি পেয়েছেন সেটার সন্ধানও তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন।