নিজস্ব প্রতিনিধি: কিছুদিন আগেই বাংলার(Bengal) শাসক দলকে কার্যত হুমকি ধমকি দিতে শুরু করে দিয়েছিল কেন্দ্রের শাসক দল। তাঁদের দাবি ছিল, ডিসেম্বরেই নাকি বাংলায় ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকারের পতন ঘটে যাবে। সেই ডিসেম্বর মাস এখনও আসেনি। কিন্তু তার মধ্যেই সেই সরকার ফেলার বা পড়ে যাওয়ার ডেডলাইন নিজেরাই রক্ষা করতে পারেনি গেরুয়া ব্রিগেড। বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে সেই সময়সীমা। কখনও বলছে পঞ্চায়েত ভোটের আগেই সরকারের পতন ঘটবে, আবার কখনও বলছে ২০২৪ সালে বাংলার বুকে লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন এক সঙ্গে হবে। বঙ্গ বিজেপির(BJP) নেতাদের এই দাবিতে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নয় তৃণমূল কংগ্রেস। বরঞ্চ তাঁদের দিক থেকে এবার বঙ্গ বিজেপিকে পাল্টা চাপ দিলেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল চাইলে ডিসেম্বর মাসে বঙ্গ বিজেপির ঘরে ৩০জন বিধায়কও থাকবে না। আর এই অভিষেক বার্তার পরে পরেই এখন রীতিমত চাপে পড়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। সেই সঙ্গে দলের সব সাংসদ ও বিধায়কদের(MP-MLA) ওপরেই কড়া নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন শুধু নয় কলকাতা, বাংলাজুড়েই এবার 5G পরিষেবা
ডিসেম্বর মাস নিয়ে অপার কৌতূহল তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে। দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার থেকে শুভেন্দু অধিকারী— বিগত কয়েক দিনে সব বিজেপি নেতার মুখেই শোনা গিয়েছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ডিসেম্বরে পড়ে যাবে।’ দেশের মধ্যে একাধিক রাজ্যে বিরোধী পক্ষের বিধায়কদের ছলে বলে কৌশলে নিজের দিকে টেনে এনে একটি নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে সেখানে বিজেপির ক্ষমতায় নিয়ে আসার ধারাবাহিক ঘটনা মোদি জমানায় দেখছেন দেশের মানুষ। বাংলাও এই চক্রান্তের বাইরে নয়। বাংলার সরকারকে ফেলে দিয়ে সেখানে পদ্মফুল ফোটাবার চক্রান্ত হয়েই চলেছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণ পদক্ষেপ বিজেপির সব ষড়যন্ত্রকে এখনও পর্যন্ত সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। পুজোর পর থেকেই তাঁরা দাবি তুলেছিল ডিসেম্বরেই মমতার সরকার পড়ে যাবে। তারপর সেই ডেডলাইন পিছোতে পিছোতে এখন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় ছুঁয়ে ফেলেছে। রাজ্যবাসীরও তাই আর বুঝতে বাকি নেই, বাংলার বিরুদ্ধে বিজেপির ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। কিন্তু কিছুটেই সেই ষড়যন্ত্র আর কূলে এসে ভিড়তে পারছে না। মাঝ গঙ্গাতেই তার সলিল সমাধি ঘটছে।
আরও পড়ুন চপ বিলোলেন মুখ্যমন্ত্রী, বিলোলেন চকলেটও
কিন্তু অভিষেক বার্তাকে হেলায় উড়িয়ে দিতে পারছে না বঙ্গ বিজেপি। কেননা অভিষেকের বার্তায় তাঁরা আবারও বিপর্যয়ের ইঙ্গিত খুঁজে পেয়েছেন। গতকাল অভিষেক জানিয়েছেন, ‘আমরা চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যে ওদের ৩০টা বিধায়কও থাকবে না। কিন্তু আমরা দল ভাঙানোর খেলা খেলি না। দল ভাঙানো, বোমা ফেলব— এ সব ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। যদি শুরু করি, দেখা যাবে।’ আর এখানেই চাপে পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। কেননা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে বঙ্গ বিজেপির নেতারা দেখেছেন নিত্যদিন কিভাবে দল ছাড়ছেন দলেরই নেতা থেকে কর্মীরা। তাঁরা দেখছেন কীভাবে ঘরে বসে যাচ্ছেন দলের আদি নেতা থেকে কর্মীরা। তাঁরা এটাও দেখছেন দলের একের পর এক বিধায়ক ও সাংসদ কীভাবে ‘যাব না, যাব না’ বলেও তৃণমূলে ভিড়ে যাচ্ছেন। আর এই দৃশ্য দেখছেন বঙ্গবাসীও। একুশের ভোটের পর একজন তৃণমূল নেতা, বিধায়ক, সাংসদও বিজেপির দিকে পা বাড়াননি। কিন্তু বিজেপি থেকে তৃণমূলে ভেড়ার স্রোত বয়েই চলেছে। বিজেপির নেতারা এটাও জানেন কোন কোন সাংসদ বা বিধায়ক তৃণমূলের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন। কারা কার রাতারাতি ‘যাব না, যাব না’ বলেও তৃণমূলে ভিড়ে যেতে পারেন। আর তাই অভিষেক বার্তার পরেই দলেরই সাংসদ থেকে বিধায়কদের ওপর নতুন করে কড়া নজরদারি চালানো শুরু করে দিচ্ছে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব।