নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে বিজেপি(BJP) যতই তৃণমূল(TMC) বিরোধিতা করুক না কেন, বাংলার পাশে বার বার দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার। আর সেই সূত্রেই বেশ বোঝা যাচ্ছে কেন্দ্রের কাছে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee)। বাংলার বুকে এবার পরিকাঠামোগত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের জন্য মমতার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন মোদি। রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণ অনুমোদন করেছে কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক থেকে সম্প্রতি রাজ্য অর্থদফতরকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত ৫,৬৭৮ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে চিঠিতে এটাও জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকার প্রয়োজনে আরও কিছু প্রকল্পের নাম পাঠিয়ে বাড়তি আরও ৩৮৯ কোটি টাকার ঋণ নিতে পারে। তবে এই বাড়তি ঋণের জন্য শর্তও থাকছে। চলতি অর্থবর্ষের মধ্যেই এই বাড়তি ঋণ নিতে হবে। প্রথম দফায় অনুমোদিত অর্থের অর্ধেক, অর্থাৎ ২৭৭৯ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রক।
আরও পড়ুন প্যান কার্ড নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত মোদি সরকারের
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকার গত বছরের আগস্ট মাসে বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এই বিশেষ ঋণ চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু তখন কেন্দ্র-রাজ্য বিবাদ কার্যত তুঙ্গে উঠেছিল। তাই বিষয়টিকেও ঝুলিয়ে রাখা হয়। কার্যত সেই ঋণ দেওয়া হবে কী হবে না সেই নিয়েও কেন্দ্রের তরফে নবান্নকে কিছুই জানানো হয়নি। কিন্তু এখন যখন মোদি-মমতা সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে, রাজ্যের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রকে, ঠিক তখনই বাংলার তরফে চাওয়া এই ঋণ নিয়ে সদর্থক বার্তাই দিল কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন মোদি সরকার। এই বিশেষ ঋণ যে প্রকল্পগুলির জন্য দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়কের সংস্কার ও সম্প্রসারণ।
আরও পড়ুন মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে পর্ষদ সভাপতি
কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সম্প্রসারণ ও সেটিকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ এখন চলছে। বেলঘরিয়ার নিমতা থেকে শুরু হয়ে এই এক্সপ্রেসওয়েটি বড় জাগুলিয়াতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দু’টি কাজের জন্য মোট ৫৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কল্যাণী ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েকে যুক্ত করার জন্য ৬ লেনের এলিভেটেড করিডর করতে দেওয়া হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিমতা থেকে মুড়াগাছা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিমি ৬ লেনে সম্প্রসারণের খরচও ধরা আছে। মুড়াগাছা থেকে কাম্পা পর্যন্ত সম্প্রসারণ ও একটি সংযোগকারী এলিভেটেড করিডরের জন্য দেওয়া হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। আবার হুগলির মগরা থেকে বড় জাগুলিয়া পর্যন্ত ১৩ নম্বর রাজ্য সড়ক প্রকল্পটির জন্য ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২৮০ কোটি টাকা। এই সড়কটি ত্রিবেণী, কল্যাণী হয়ে আসবে। তার জন্য হুগলি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপাশি হুগলির আরামবাগ এলাকায় ৪ নম্বর রাজ্য সড়ক ১২ কিমি অংশে চার লেনে চওড়া করার প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বনগাঁ-চাকদহ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ অনুমোদিত হয়েছে ২০ কোটি টাকা। পশ্চিম বর্ধমানে অজয় নদের ওপর কেঁদুলির কাছে সেতু নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি টাকা। কার্যত এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের বুকে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি রাস্তাগুলির ধারে শিল্পপার্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও গড়ে রাখতে চান। তাঁর এই প্রয়াস যাতে বাস্তবায়িত হয় তার জন্যই এবার বাংলার পাশে দাঁড়াল মোদি সরকার।
