নিজস্ব প্রতিনিধি: এক স্কুলশিক্ষিকার(School Teacher) মামলার জেরে প্রকাশ্যে এল বেশ বড়সড় কেলেঙ্কারি, তাও আবার সেই শিক্ষা দফতর ঘিরেই। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই বর্ধিত বেতন পেয়ে চলেছেন বহু প্রাথমিক শিক্ষক। কীভাবে এই শিক্ষকরা বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। ঘটনার জেরে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য শিক্ষাদফতরও। এই ঘটনাও নিয়োগ দুর্নীতির মতোই ঘটেছে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে উঠে এসেছে। অর্থাৎ ঘুষ দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে কিনা তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে তেমনি প্রশ্ন উঠেছে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঘুরপথে বেতন বাড়ানো হয়েছে কিনা! সূত্রে জানা গিয়েছে এই কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।
আরও পড়ুন Saltlake-এ Porn Racket, গ্রেফতার গেস্ট হাউসের ম্যানেজার
জানা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার হলদিয়া মহকুমার নন্দীগ্রামের(Nandigram) বনশ্রী গৌরী স্পেশাল প্রাইমারি স্কুলে ২০১৭ সালে সহ-শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন রীতা করণ। তিনি ‘পে ব্যান্ড-২’ হিসেবে বেতন পেতে শুরু করেন। তবে, তিনি দেখেন, তাঁরই এক সহকর্মী সমান শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্কেল-এ হারে বেতন পাচ্ছেন। তখন তিনি কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) বর্ধিত বেতনের দাবিতে মামলা করেন। তারপরেই বিষয়টি রাজ্য শিক্ষা দফতরের নজরে আসে। কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা NCTE’র স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, B.Ed বা স্পেশাল বিএড করে কেউ যদি প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরি পান, তাহলে তাঁকে প্রশিক্ষিত হিসেবে গণ্য করা হবে না। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষকতার চাকরির ক্ষেত্রে গণ্য করা হয় DL.Ed বা সমতুল ডিগ্রি। যাঁরা বিএড বা স্পেশাল বিএড করবেন, তাঁদের চাকরি পাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি ছ’মাসের ব্রিজ কোর্স করতে হবে। তাহলেই তিনি প্রশিক্ষিত হিসেবে গণ্য হবেন এবং সেই হারে বেতন পাবেন। নাহলে তাঁর বেতন একটি স্কেল কম থাকবে।
আরও পড়ুন মমতার সিদ্ধান্তে স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ রেকর্ড রাজস্ব আদায়
রীতা দেবীর মামলার জেরে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। তার জেরে রাজ্য শিক্ষা দফতর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে এই ধরনের কতজন শিক্ষিক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন ও কীভাবে পাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের জেরেই পূর্ব মেদিনীপুরের ডিআই তদন্তে নামেন। দেখা যায়, জেলার অন্তত ১৮ জন প্রাথমিক শিক্ষক ব্রিজ কোর্স ছাড়াই বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন। ১টি জেলাতেই এই অবস্থা হলে সারা রাজ্যে এই সংখ্যাটা কত সেটা ভাবতেই এখন মাথায় হাত পড়েছে শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের। তাঁরা রাজ্যের অনান্য জেলাতেও এখন খোঁজখবর শুরু করেছেন সেখানে ঠিক কতজন প্রাথমিক শিক্ষক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই বর্ধিত বেতন পাচ্ছেন। এদিকে রীতাদেবীর মামলার শুনানিতে রীতাদেবীকে জানানো হয়, ব্রিজ কোর্স করলেই তিনি বর্ধিত বেতন পাবেন। বরং, যাঁরা ব্রিজ কোর্স না করে বর্ধিত বেতন পেয়ে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্ধিত বেতন বন্ধ করা তো বটেই, অন্যায্যভাবে পেয়ে আসা অর্থ ফেরতও চাওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন বাংলার ৬ লক্ষেরও বেশি কৃষক নাও পেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধি’র টাকা
এখান প্রশ্ন উঠছে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছাড়া কীভাবে বর্ধিত বেতন পেয়ে যাচ্ছিলেন ওই শিক্ষকরা। অনেকেই কিন্তু মনে করছেন এই ঘটনার পিছনে নিয়োগ দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাঁদের হাত থাকতে পারে। তবে নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, এক রাজনৈতিক প্রভাবশালীর হাতও এর পিছনে থাকতে পারে যিনি আগে শাসক দলে থাকলেও এখন বিরোধী শিবিরে রয়েছেন। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের অবশ্য দাবি, এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হলে তবেই আসল ঘটনা সামনে আসবে। কেননা যেটা এসেছে সামনে সেটা হিমশৈলের চূড়ামাত্রও হতে পারে। এই ধরনের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া মানে কাউকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা নয়। বরং, যাঁরা কষ্ট করে ব্রিজ কোর্স করে নিজের বেতন নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের প্রতি সুবিচার করা। আর যারা তা করেননি তাঁদের কিছুটা হলেও শাস্তি দেওয়া। বর্ধিত বেতন ফেরত চাওয়া হবে তাঁদের কাছ থেকে। কিন্তু প্রশ্ন, ওই সব শিক্ষকদের নিয়োগটাই যদি দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে হয়ে থাকে তো তাঁদের শাস্তি কেন শুধু আংশিক বেতন ফেরতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কেন!