নিজস্ব প্রতিনিধি: পুজোর পর থেকেই বার বার অভিযোগ উঠছে সকালের দিকে, দুপুরে ও সন্ধ্যা নামলেই বাসের আকাল দেখা দিচ্ছে কলকাতার রাজপথে। ফলে নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি আমজনতাকেও দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। বাস মালিকেরা অবশ্য এই পরিস্থিতি যে তৈরি হয়েছে তা অস্বীকার করছেন না। বরঞ্চ তাঁরা জানিয়েই দিচ্ছেন যে হারে জ্বালানির দর বেড়ে চলেছে তাতে করে নিত্যদিন রাস্তায় বাস নামানো সম্ভব নয়। কম বাস চালু রেখেই পরিষেবা দেবেন তাঁরা। বাস মালিকদের এই মনোভাব পরিষ্কার হয়ে যেতেই এবার তাঁদেরকেই চিঠি দিচ্ছে রাজ্য পরিবহণ দফতরের অধীনে থাকা কলকাতার রিজ্যুনাল ট্রান্সপোর্ট অফিস বা আরটিও। সেই চিঠি দেওয়া হচ্ছে বাস মালিকদের সংগঠনগুলিকে। চিঠিতে জানতে চাওয়া হচ্ছে, কলকাতা ও শহরতলিতে এখন ঠিক কত বাস চলছে।
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরে পরেই কলকাতার আরটিও ১৮ অক্টোবর বাস মালিকদের সংগঠনগুলিকে এই তথ্য জানাতে চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠির কোনও উত্তর তাঁরা পাননি বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলির তরফে। তার জেরে চলতি মাসের ৮ তারিখে সংগঠনগুলিকে ফের চিঠি দেওয়া হয়েছে। মূলত ৭টি বাস মালিক সংগঠনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই ৭টি সংগঠন হল – বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, অল বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসেস, ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, জয়েন্ট কাউন্সিল অব সিন্ডিকেট, বাস মিনিবাস অপারেটর কোঅর্ডিনেশন কমিটি ও অল বাস-মিনিবাস কমিটি। রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, প্রাক কোভিডকালে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় সাড়ে ৭ হাজার বাস চলত। কিন্তু এখন সেটাই কমে তিন হাজারে নেমে এসেছে। ছুটির দিন সেটা আরও কমে যায়। আর তার জেরেই হয়রানির মুখে পড়তে হয় নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি আমজনতাকে।
এবার তাই আরটিও কর্তৃপক্ষ মারফত রাজ্য পরিবহণ দফতর জানতে চাইছে এখন নিত্যদিন কোন রুটে ঠিক কত বাস রাস্তায় নামছে। এই সম্পর্কে কোনও নথি রাজ্য পরিবহণ দফতরের হাতে নেই। সেই কারনেই বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলিকে চিঠি দিয়ে সেই তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিবহণ দফতরের অপর একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোভিড কালে বহু বাস বসে গিয়েছে। অনেক মালিক রুট থেকে বাস তুলে নিয়েছেন বা তা বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে আবার অন্য রুটেও বাস চালাতে শুরু করেছেন। আর সবটাই হচ্ছে আরটিও’কে না জানিয়ে। সূত্রের দাবি, রাস্তায় যে বাস কমেছে তা আগেই বুঝেছে রাজ্য সরকার। এবার তাই কোন কোন রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে, সেই বিষয়ে তথ্য হাতে নিয়ে নতুন বাস পারমিট দিতে চাইছে সরকার। সংগঠনগুলি মারফত এই এই তথ্য সহজে পাওয়া সম্ভব বলেই এখন তাঁদের চিঠি পাঠানো হয়েছে যে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় ঠিক কত বাস চলছে। এই বিষয়ে সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসেসের পক্ষে টিটো সাহা জানিয়েছেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে রাজি। পুজোর ছুটিতে এই তথ্য দেওয়া সম্ভব ছিল না। পুজোর ছুটি কেটে গেলেই আমরা সব রুট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আরটিও-তে জানাব।’ তবে অঘোষিত ভাবে বাস মালিক সংগঠনগুলির তরফে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে কলকাতা ও শহরতলির রাস্তায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাস চলাচল করলেও, বর্তমান সময়ে তা আড়াই হাজারে নেমে এসেছে।