নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: ২৩ বছর আগে আচমকাই একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল মা। গর্ভধারিনীর মুখটাই স্মৃতি থেকে ক্রমেই ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছিল। অনেক খুঁজেও মায়ের সন্ধান না পেয়ে কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছিল পিঞ্জিরা আক্তার। স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তবুও আল-লাহের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছছিল, মায়ের সঙ্গে অন্তত একটি বার দেখা করার সুযোগ দেওয়া হোক। অবশেষে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পিঞ্জিরার সেই ইচ্ছে পূর্ণ করেছেন। ২৩ বছর বাদে ফের নিখোঁজ মায়ের সন্ধান পেয়েছে ৩৫ বছর বয়সী ধোপদুরস্ত গৃহবধূ। শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) যখন মা-মেয়ের পুনর্মিলন ঘটল তখন দুজনের চোখে জল। তবে তা যে আনন্দাশ্রু।
ঘটনাটি খুলেই বলা যাক। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষখালী গ্রামের বাসিন্দা ফজিলা খাতুন। বিয়ের কয়েক বছর বাদেই স্বামী মারা যায়। দুই ছোট মেয়ে ফিরোজা আর পিঞ্জিরা আক্তারকে নিয়ে অথে জলে পড়েন। সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজে লেগে যান। আর দুই মেয়েকে এক অনাথ আশ্রমে রাখেন। ২৩ বছর আগে আচমকাই একদিন নিখোঁজ হয়ে যান ফজিলা। দুই মেয়ে অনেক খোঁজাখূঁজি করেছিল মায়ের। কিন্তু কোনও হদিশ না পেয়ে হাল ছেড়ে দেয়। অবশেষে কয়েক মাস আগে আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ ত্রিপুরা সরকারের কাছ থেকে জানতে পারেন, ফজিলা খাতুন নামে বিষখালী গ্রামের এক মহিলা আগরতলায় সরকারি হোমে রয়েছে। ২৩ বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে ওই মহিলা ঢুকে পড়েছিলেন আগরতলায়। মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরার মর্ডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ত্রিপুরা সরকারের কাছ থেকে ফজিলার হদিশ পাওয়ার পরেই আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জেলা প্রশাসনের তরফে খুঁজে বের করা হয় ফজিলার ছোট মেয়ে পিঞ্জিরাকে। শুক্রবার আখাউড়া সীমান্তে মেয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২৩ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া মাকে। আর গর্ভধারিনীকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন পিঞ্জিরা। এক আবেগঘন ও হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।