নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সঙ্ঘাত কার্যত নতুন মোড় নিল। শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য পদ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে সেই পদে মুখ্যমন্ত্রীকে আনার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া রাজ্যের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রয়েছে রাজ্যপাল। রাজ্যের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি আচার্য পদে রয়েছেন। কিন্তু এবার এই ছবিতে বদল আনতে চাইছে রাজ্য সরকার।
এদিন ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন রাজ্যপাল। তাই সাময়িক ভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁকে রাজ্য সরকারের পৃষ্টপোষিকতায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় কিনা সেই ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে সাংবিধানিক ও আইনি দিকটিও। পরামর্শ করা হচ্ছে আইনজ্ঞদের সঙ্গেও। ব্রাত্য কার্যত এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপাল রাজ্যের সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্য পদে থাকলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। তাঁদের আপত্তি ধনখড়কে নিয়ে। তাই ধনখড় যতদিন বাংলায় রাজ্যপাল হিসাবে থাকবেন ততদিন রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাতে মুখ্যমন্ত্রীকে অন্তরবর্তীকালীন আচার্য হিসাবে রাখা যায় সেই বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। ব্রাত্য পরিষ্কার ভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যপাল পদে থেকে জগদীপ ধনখড় রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করছেন না। বরঞ্চ নিরন্তর অসযোগিতার পাশাপাশি টুইটে আক্রমণ করে চলেছেন। সেই জায়গা থেকেই তাঁরা চাইছেন রাজ্যপালকে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে অপসারিত করতে। পরবর্তীকালে অন্য কেউ রাজ্যপাল হয়ে এলে তাঁরা ফের পুরাতন পথেই হাঁটা দেবেন।
এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তিনি যদি দিনের পর দিন এ ভাবে ফাইল ফেলে রাখেন। বিন্দুমাত্র সহযোগিতার মনোভাব যদি না দেখান, তাহলে কেরলের রাজ্যপাল যেমন বলেছেন, প্রাদেশিক স্তরে আমরাও তা করতে বাধ্য হব। সংবিধান খতিয়ে দেখবো, দরকারে আইনজ্ঞদের পরামর্শ নেবো। আমরা আইনজীবীদের কাছে জানতে চাইব, অন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য পদে আমরা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আসতে পারি কিনা।’ তবে বিষয়টি যে খুব সহজে হবে না তা মেনে নিচ্ছেন শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরাও। সেক্ষেত্রে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য এদিন সকালেই রাজ্যপাল টুইট করে আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। লিখেছেন, ‘মমতা সরকারের আমলে শিক্ষাব্যবস্থায় চিত্রটা ভয়াবহ। রাজ্যের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আচার্য এবং উপাচার্য রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে এলেন না। রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা চলছে। আইনের নয়, শাসকের আইনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায়। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।’ রাজ্যপালের এহেন টুইটকে মোটেও ভাল ভাবে নেয়নি রাজ্য সরকার। তার জেরেই এদিন শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যপালকে আচার্য পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনা সবার সামনে তুলে ধরলেন।