সেটা ১৯৬৩ সালের কথা। চিনের সঙ্গে ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে গেল। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে সেনারা জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন। কিন্নরকণ্ঠী লতা গাইলেন ‘অ্যায় মেরে ওয়াতান কে লোগো’ গানটি। তাঁর এই গান শুনে কেঁদেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
বস্তুত গান ছিল তাঁর জীবনমন্ত্র। কাজ ছিল গান গাওয়া। সাতসুর ছিল ধ্যানজ্ঞান। তাঁর কণ্ঠের জাদু বশ করে রেখেছিল শতকোটি ভারতবাসীকে। মৃত্যু তিনি সহ্য করতে পারতেন না। অথচ তাঁকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হল।
যে কোনও মৃত্যুই গভীর শূন্যতা তৈরি করে। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু আক্ষরিক অর্থেই শূন্যতা তৈরি করেছে। কেননা, তিনি নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছিলেন একমেবদ্বিতীয়ম। মধ্যগগনে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনযুদ্ধ তাঁকে লতা মঙ্গেশকর তৈরি করেছে। কিন্তু মাটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি।
এমন কোনও পরিচালক নেই, যার সঙ্গে তিনি কাজ করেননি। অনিল বিশ্বাস থেকে শচীন দেববর্মণ, খৈয়াম, নৌসদ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কল্যাণজি-আনন্দজি, রামচন্দ্রমের মতো অগুনতি পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তৈরি করেছিলেন নিজস্ব ঘরানা। সমালোচনাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করতে শিখেছিলেন। বলা যেতে জীবনযুদ্ধ তাঁকে শিখিয়েছিল সমালোচনাকে সাদরে গ্রহণ করতে।
বাবা ছিল বটবৃক্ষের মতো। সেই বাবা হঠাৎ চলে গেলেন। বয়স মাত্র তেরো বছর। আছে আশা, ঊষা, মিনা আর হৃদয়নাথ। পুরো পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। শোক আগলে নয়, জীবনযুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছিলেন লতা। দরকার ছিল পয়সার। প্রথম গান রেকর্ডিং ১৯৪২ সালে। কিতী হসাল-য়ে প্রথম গান রেকর্ডিং করেন। জীবনের প্রথম উপার্জন মাত্র ২৫ টাকা। পাড়ি দিলেন আরব সাগরের তীরে, উস্তাদ আমন আলি খানের কাছে। শশধর মুখোপাধ্যায়ের লতার গলায় গান শুনে বলেছিলেন বড্ডো সরু গলা। সেই সরু গলায় পরবর্তীকালে গোটা বিশ্বকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল।
বিশ্ব আরও একবার বাকরুদ্ধ হল। এবার শেষবারের মতো।