নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনও কিছুই যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, আরও একবার সে কথা প্রমাণ করলেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূন্যেরঝার চর গ্রামের বাসিন্দা মারুফা আক্তার। চলতি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বড় মেয়ে শাহী আক্তারের সঙ্গে একই সঙ্গে বসেছেন তিনি। সসম্মানে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে স্নাতকস্তরেও পড়াশোনা করার ইচ্ছে রয়েছে চার সন্তানের জননী মারুফার। মা ও মেয়ের একই সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার ছবি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন নাউতারার বাসিন্দা মারুফা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে বরাবরই মেধা তালিকায় ছিলেন। ইচ্ছে ছিল, লেখাপড়া শিখে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গিয়েছিল। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়েই বিয়ে হয়ে যায় পাশের গ্রামের বাসিন্দা পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী সইদুল ইসলামের সঙ্গে। তারপর কেটে গেছে ১৯ বছর। বিয়ের পর থেকেই ঘর সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মারুফা। একে একে জন্ম দেন দুই ছেলে ও দুই মেয়ের। কিন্তু লেখাপড়া শিখে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আকাঙ্ক্ষা সবসময় তাকে তাড়িয়ে বেড়াত।
কয়েক বছর আগে স্বামী ও বড় মেয়ের উৎসাহে ভর্তি হন বাড়ির কাছেই ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায়। ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেন। মেয়ের চেয়েও বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করেন। এর পরে ডিমলা সরকারী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারী মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মঙ্গলবার পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মারুফা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘স্বামী আর বড় মেয়ের ইচ্ছেতেই ফের পড়াশোনা শুরু করতে পেরেছি। মনের কোনে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। ইচ্ছে করছি। উত্তীর্ণ হলে আমি স্নাতক সম্মানে ভর্তি হব বলে আশা রাখছি।’ পড়াশুনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্ত্রীর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মারুফার স্বামী সইদুল ইসলাম।