নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরবঙ্গের প্রাচীন কালীপুজোর মধ্যে অন্যতম উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ বন্দরের মা করুণাময়ী আদি কালিবাড়ির পুজো। কথিত আছে এই পুজো পাঁচশো বছরেরও পুরোনো। মন্দির কমিটির দাবি, চলতি বছর এই পুজো ৫৪৫ বছরে পড়েছে। তবে রায়গঞ্জের মানুষের কাছে এই মন্দির সম্পর্কে যেমন ভক্তি বিরাজ করে তেমনই রয়েছে অসংখ্য জনশ্রুতি। এই মন্দিরের ইতিহাসও সমৃদ্ধ। জানা যায়, আনুমানিক ৫৪০-৫৪৫ বছর আগে এক পাঞ্জাবী সাধু বন্দরের কুলিক নদীর ধারে এই ফাঁকা এলাকায় এসেছিলেন তন্ত্র সাধনার জন্য। তিনি এখানে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন তৈরি করে সাধনা শুরু করেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। পরে এই পঞ্চমুণ্ডির আসনেই ঘট প্রতিষ্ঠা করে তিনি কালীপুজো শুরু করেছিলেন।
সেই শুরু যা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে করে আসছেন রায়গঞ্জবাসী। এলাকায় জনশ্রুতি মা এখানে খুবই জাগ্রত, ওই পঞ্চমুণ্ডির আসনে প্রতিমা না থাকলেও এখানে মায়ের নিত্য আবির্ভাব হতো। মাঝে মধ্যেই মায়ের পায়ের নূপুরের আওয়াজ শুনতে পেতেন অনেকে। ফলে দিকে দিকে কুলীক নদীর তীরে এই পাঞ্জাবী সাধুর পীঠস্থানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৮০৯ সালে মহারাজা দীননাথের বংশধর শঙ্কর নাথ চৌধুরির উদ্যোগে পঞ্চমুণ্ডির বেদি ঘিরে গড়ে ওঠে মন্দির। বেনারসের শঙ্করাচার্য মঠের সাধু সত্যানন্দতীর্থ দণ্ডস্বামী বেনারস থেকে এখানে মায়ের একটি কষ্টি পাথরের মূর্তি আনেন। যা ওই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওই মূর্তিতেই পুজো হয়ে আসছে আজ পর্যন্ত। একসময় লোকমুখে রায়গঞ্জের বন্দরে মা আদি কালী মাতা বলে পরিচিতি পায়। কথিত আছে মায়ের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে। ওই দিনও এই মন্দিরে বড় উৎসব হয়।
কালীপুজোর দিন ছাড়াও বিশেষ কয়েকটি দিনে এই মন্দিরে পুজো শুরু হয় রাত পৌনে এগারোটা থেকে। সারারাত পুজো ও হোম-ষজ্ঞ চলার পর হয় পাঁঠা বলি। কথিত আছে একসময় ভয়ঙ্কর জলদস্যুরা এই আদি কালী মন্দিরে পুজো দিতেন আসতেন রাতের অন্ধকারে। তবে এটা ঠিক যে সেই সময় রায়গঞ্জ বন্দরে বড় বড় নৌকা বা বজরা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আসতেন ব্যবসা করতে। বা এই পথে চলাচল করত ব্যবসায়ীদের নৌকা। তাঁদের বেশিরভাগই বানিজ্য করতে যাবার আগে ও ফেরার পথে রায়গঞ্জ বন্দরে নৌকা রেখে এই আদি কালী মাতার মন্দিরে পুজো দিতেন।