এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

করম শুধু মাত্র পুজো নয়, এই পরব শিক্ষার-আনন্দের

করম হল পূর্বভারতের কুড়মি আদিবাসী ও হিতমিতান গোষ্ঠীর অন্যতম বৃহৎ পরব। মানুষ যখন প্রথম চাষবাস করতে শিখেছিল সেই আনন্দের মহুর্তেরই সাক্ষী হল করম পরব। করম পরবের নেগ নীতি থেকে এটা পরিষ্কার যে চাষের শুরু মেয়েদের দ্বারাই হয়েছিল।

করম (KARAM) হল সেই পরব যেখানে একাধারে বোন মঙ্গলকামনা করে ভাইয়ের জন্য। বলে “হামার করম ভাই এর ধরম” আবার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলা এবং তাকে রক্ষার বার্তাও দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে কৃষি ও ওষধি গুণাগুণ সম্পন্ন গাছপালার জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে অত্যন্ত সুচারু ভাবে বাহিত হয় করমের মাধ্যমে। তাই একে যদি “ডরমেটরি সিস্টেমের ” ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয় তাহলেও অত্যুক্তি হয় না।

ডরমিটরি সিস্টেমে যে ভাবে কোনও আদিবাসী সম্প্রদায় তার কিশোর কিশোরীদের সমাজের রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও পূর্বপুরুষ অর্জিত ভেষজ ও সামাজিক জ্ঞান প্রদান করে, এখানেও তেমন ভাবেই প্রতিটি নেগাচার সমাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি ও মহিলাদের দ্বারা দেখিয়ে দেওয়া হয়।

করম পরবে জাওয়া গীতগুলি সমাজের ইতিহাসের জীবন্ত দলিল এবং একই সঙ্গে এই জাওয়া গীতের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে মেয়েদের দুঃখ, কষ্ট এবং সামাজিক কোনও সম্পর্ক কী ভাবে পালন হবে তার জ্ঞান।

“খইড়কা খুচি পাটের শাঢ়ি রহইল সিঁকায় তুলা গো

ভাইলে ভাইলে গেল ভাদর মাস গো

মা যদি থাইকত অবিশ করে আইসত

ভাই ভাজ ত জনমেত দুশমন।। ” – এখানে এক মহিলা যে করম পরবে বাপের বাড়ি আসতে চাইছে কিন্তু তাঁকে তাঁর ভাই আনতে আসেননি। তাই তিনি গানের মাধ্যমে তাঁর দুঃখ প্রকাশ করছেন।

করমের ৫/৭দিন আগে কোনও জলাশয় থেকে বালি তুলে জাওয়া ডালা করা হয় তাতে নানা রকমের বীজ দেওয়া হয় অঙ্কুর হওয়ার জন্য। মহিলারা প্রতিদিন সেউ জাওয়া ডালার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচ গান করে এবং জাওয়া র যত্ন নেন। একটা গানের মাধ্যমে ব্যাপারটা বোঝানো যায় –

“মুগ দিব জনহাইর দিব আরঅ দিব কুত্থি

জনহাইর সইরসা হলুদ পানি সঙে গঁধা মেথি

হালা হালা ঝিঙা ফুলে সাজাব জাওয়া ডালা

তর নামে জাগরনে হব মাতোয়ারা”

এভাবেই আসে করমের দিন যেদিন চারদিক থেকে ভেসে আসে

“আইজ রে করম ঠাকুর ঘরে দুয়ারে

কাইল রে করম ঠাকুর শাঁক নদীর পাড়ে”

নারী ও পুরুষরা ওই দিন বনে যান এবং নানান রকমের বনজ কিছু গাছের অংশ নেন, যা করমে ফুল হিসাবে কাজে লাগে। সেই সঙ্গে অবশ্যই নাচ-গানও হয় দিনভর।

রাত্রে বেলা করম ডাল পোঁতা হয় আর তার চারপাশে গোল করে বাচ্চারা বসে “করমের কহনী” শুনে। তারপর রাত্রিভর জাগরণ চলে। সকালে জাওয়া ডালার চার পাশে মহিলারা জাওয়া গান- নাচ করেন। তার পর করম ডালকে কোনও জলাশয়ে বিসর্জন করা হয় এবং মহিলা ও পুরুষরা একটি ‘ধান গাছি’ এনে তার সামনে বাসি ভাত খেয়ে “পারনা” করেন।

মোটামুটি ভাবে এটাই করম। কিন্তু এর থেকে পাওয়া জ্ঞান ব্যাপক। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, করমে ব্যবহৃত প্রতিটি গাছপালা মারাত্মক রকম ভাবে ভেষজ গুন সম্পন্ন। যেমন করম গাছ- যাকে করম পরবে পুজা করা হয়। তার বিজ্ঞানসম্মত নাম MITRAGYNA PARVIFOLIA। এই গাছের মূল ও ছাল কোলিক ফিভার, পেশির ব্যথা, জ্বালা জ্বালা ভাব, গাইনোলজিক্যাল প্রবলেম, কফ, প্রভৃতির সমস্যায় এবং ন্যাচারাল ভায়াগ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এই গাছের পাতা জন্ডিস ও আলসার উপসমে সাহায্য করে। এই গাছের ফলের জুস মায়েদের দুগ্ধ নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে।

আরেকটি যে গাছের কথা বলব তাকে আমাদের স্থানীয় ভাষায় অসারিয়া পাতা গাছ বলে। যার বিঞ্জানসম্মত নাম হল COSTUS LGNEUS। এই গাছের পাতাতে কোরোসলিক অ্যাসিড থাকে,  যা ইনসুলিন তৈরি তে সাহায্য করে। ইনসুলিন যা ডায়াবেটিস রোধ করে।

করম পরব প্রকৃতি রক্ষার জন্যই হোক বা লোকওষুধির সাহায্য জটিল রোগের চিকিৎসার জন্যেই হোক, তা কুড়মি তথা আদিবাসী সমাজের রীতিনীতি সংস্কৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। করমের সময় ভাইদের কাছে বোনেদের আবেদন থাকে

” সোব পরবে রাখবি দাদা

ইঁদ করমে আনবি রে

ইঁদ করম জাওয়া ডালি

সঙী মনে পড়ে রে “

করম মানে এখানে শুধু মাত্র পুজো নয়, করম এক শিক্ষনীয় পরব, আনন্দের পরব। তাই তো  করমের শেষে প্রার্থনার সুরে ছোট নাগপুর জুড়ে একটাই কথা ভাসতে থাকে-  

“যাহ যাহ করম ঠাকুর যাও ছ অ মাস

পড়তঅ ভাদর অ মাস আনব ঘুরাই।। “

                              লেখা ও ছবি- অভিজিৎ কাটিয়ার

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

গন ভাইফোঁটার পরিকল্পনা নিয়েছে বসিরহাটের ‘নবোদয় সংঘ’

বনগাঁ থানার এবারের কালীপুজোর থিম ‘ কৈলাস পর্বতে মহাদেব’

বাঁকুড়ার সাঁতরা বাড়ির “বড় বৌমা” পূজিত হলেন মা কালীর রূপে

নৈহাটির বড়মার পুজোয় ভক্তদের ভিড়

তারাপীঠে সারারাত খোলা থাকছে গর্ভ গৃহের দরজা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রয়েছেন উপবাস, নিজের হাতে রান্না করলেন ভোগ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর