নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্রিটিশ বিরোধী গণ বিদ্রোহের কথা বললে উঠে আসে রানি শিরোমণি, অচল সিং, গোবর্ধন দিকপতি, দুর্জন সিংয়ের নাম উঠে আসে। আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে রাজা (জমিদার) দুর্জন সিংহের (DURJAN SINGHA) গড় নিয়ে সামান্য কিছু কথা। ১৭৯৮ সালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুর্জন। রাইপুরের এই চুয়াড় বিদ্রোহকে পরে তিনি বগড়ির চুয়াড় বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। এখানে রয়েছে দেবী মহাময়া (DEVI MAHAMAYA) মন্দির। আগে এই অঞ্চলে ‘গড়’ ছিল বলে নাম ছিল গড় রাইপুর। এখন গড় নেই। আর জায়গার নাম থেকে উধাও গড়। এখন বাঁকুড়ার এই অঞ্চলের নাম শুধুই ‘রাইপুর’।
রাইপুরে দুর্জন সিংহের বিদ্রোহের প্রথম দিকেই তিনি প্রায় দেড় হাজার সেনা নিয়ে রাইপুর পরগনার প্রায় ২৭- ৩০ টি গ্রাম নিজের আয়ত্বে আনেন। বিদ্রোহের জন্য দুর্জন সিংহকে অবশ্য ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হতে হয়েছিল। কিছুটা প্রমাণের অভাবে ও কিছুটা সমঝোতা করে মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। ক্ষতিপূরণ দিয়ে বংশধর ফিরে পেয়েছিলেন জমিদারি। তারপর ঋণগ্রস্থ এই জমিদারি হস্তান্তরিত হয়ে যায়।
এখন ধ্বংসাবশেষটুকুই আছে। সামান্য দূরেই রয়েছে দেবী মহামায়ার মন্দির। দেবী এখানে ‘কোকোমুখা’। যদিও মনে করা হয়, এখানের শিলাখণ্ড প্রথমে দেবী চণ্ডী রূপে পূজা পেতেন। পরে তা বিবর্তিত হতে হতে ‘মহামায়া’।
ব্রিটিশদের অতিরিক্ত করের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন একাধিক সম্প্রদায়। শুধু ‘চুয়াড়’ নয়। ব্রিটিশরা অবশ্য আন্দোলনকে হেয় করতে নাম দিয়েছিল ‘চুয়াড়’। এখানে তারা চুয়াড় মানে বর্বর, অসভ্য, একগুঁয়ে বোঝাত। এই বিদ্রোহকে একটি সম্প্রদায়ের বলে চিহ্নিত করা ঠিক নয়। ব্রিটিশ বিরোধী গণ বিদ্রোহ বলা যেতে পারে।
ফিরে আসি, রাইপুরের সিংহ গড়ে। এখানে রাজপরিবারের সদস্যরা অবশিষ্ট গড় সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর আগে সেইভাবে বলার মত সংস্কার হয়েছিল সম্ভবত ১৯১৩ সালে। তা জানালেন রাজার বংশধর ইন্দ্রজিৎ সিংহ। অন্যদিকে মহামায়া মন্দির সংস্কার হচ্ছে রাজ্য সরকার ও স্থানীয়দের অনুদানে। দুর্গাপুজোর সময় শহুরে পুজো ছাড়িয়ে প্রকৃতির কোলে অন্যরকম পুজোর স্বাদ নিতে দেখে আসতে পারেন এই পুজো।
– নিসর্গ নির্যাস মাহাতো