নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’, প্রবাদ বহু পুরানো। জলপথ পেরিয়ে রাজ্যে এই তীর্থ সম্ভবত একটাই। তবে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। তাই পথ আর দুর্গম নয়। তবে এত যে রমরমিয়ে মেলা বা পূণ্যস্নান, তার পেছনে কারণ কী?
রামায়ণ- মহাভারতে এই স্থানের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। এখানেই রয়েছে কপিলমুনির আশ্রম। তবে মূল আশ্রম আজ আর নেই। তা জলে বিলীন হয়ে গিয়েছে। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে মন্দির ও আশ্রম তৈরি করে দিয়েছে। কালিদাসের রঘুবংশম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কপালকুণ্ডলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেবতার গ্রাস কবিতা- সাহিত্যের ভাণ্ডারে দিকে দিকে গঙ্গাসাগর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল কপিলমুনির মন্দির জলে বিলীন হওয়ার পরে ৬বার নতুন মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। সবই চলে গিয়েছে জলের গর্ভে। এখন যে মন্দির, তা ১৯৭১ সালে মতান্তরে ১৯৭৩ সালে অযোধ্যার হনুমানগড়ি আশ্রমের মোহান্ত শ্রী রামদাসজী মহারাজের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান রাজ্য সরকার মন্দির ও আশ্রমকে নতুন করে সংস্কার করে।
এবার আসা যাক পুরাণ কথায়। কপিলমুনি কে ছিলেন? ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, মহর্ষি কর্দম মুনি তাঁর পিতা এবং পৃথিবী শাসক স্বয়ম্ভব মনুর কন্যা দেবহূতি তাঁর মাতা। প্রজাপিতা ব্রহ্মার আদেশে কঠোর তপস্যা করেছিলেন কর্দম মুনি। তাঁর উপাসনায় তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু দেখা দিয়েছিলেন মুনিকে। মুনি এবং দেবহূতি’র বিয়ে হয়ে বিষ্ণুর নির্দেশেই। ভগবান বলেছিলেন, নতুন দম্পতির ৯ কন্যাসন্তান হবে। তাঁরা ধরাধামের সমস্ত সৃষ্টিকে জীবিত স্বত্ত্বা দিয়ে পূর্ণ করবেন। আর স্বয়ং বিষ্ণু তাঁদের কোলে জন্ম নেবেন পুত্র হিসেবে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে প্রদান করবেন সাংখ্য দর্শন। সেই পুত্র সন্তানই কপিল মুনি (বৈদিক মুনি)। তাঁরই আশ্রম ছিল গঙ্গাসাগরে। লোক বিশ্বাস, এই মুনি ছিলেন প্রজাপিতা ব্রহ্মা’র পৌত্র মনু’র বংশধর।
গঙ্গাসাগরে (GANGA SAGAR) নাগা সন্ন্যাসীদের জন্য পৃথক ঘাট থাকে। আউলবাউল থেকে বিভিন্ন ধারার সাধক থাকেন মূল মন্দির চত্বরে। সকলের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা বাসস্থান। আর পুণ্যস্নানের সময়ে অনেকের আবার থাকে আখড়া। সেখানেই হয় সাধনা। (প্রথম পর্ব- কপিল মুনি)
দ্বিতীয় পর্ব: আগামিকাল