নিসর্গ নির্যাস মাহাতো: দূর থেকেই কানে আসবে উচ্ছ্বল জলের শব্দ। যেন কোনও এক নিপুণ ছন্দে বাঁধা। শব্দ যত না প্রখর, তার চেয়ে অনেক বেশি মায়াবী। গাছগাছালির জঙ্গল পেরিয়ে এক স্বপ্নভূমি। আর তার চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বড় বড় পাথর। এখানের জল কাঁচের মত স্বচ্ছ। নিচে দেখা যায় বাহারি নুড়ি- পাথর।
ছোট্ট গ্রাম ঘাঘরা। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়িতে। গ্রাম ছাড়িয়ে একটু ভেতরে গেলেই দেখা মিলবে সারি সারি পাথরের। যেন পাহাড়। বিদেশ হলে কদর থাকত ভালই। কথায় আছে ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’। ঠিক সে রকমই অবস্থা ঘাঘরার। উঁচু উঁচু পাথরের কোল দিয়ে বয়ে চলেছে জলের স্রোত। যেন নিখুঁত ছন্দ। যখন কবিকুল গদ্য নাকি অন্তমিল নিয়ে বিবাদ করে তখন নিজস্ব ছন্দে বয়ে যায় ঘাঘরার জল। স্বচ্ছ জলের নীচেই দেখা যায় জমে থাকা পাথরের মালা। পাথরে দেখা মেলে আর্টেজীয় কূপের। জঙ্গল ঘেরা ঘাঘরার সেই পাথর আর জলের থেকে মন একটু সরলেই বড় বড় পাথরের গায়ে দেখা মিলবে টুকরো কবিতার। কেউ লিখেছে কিন্তু কে লিখেছে তা জানা নেই কারও। কোথাও লেখা কোথাও লেখা “তুই আমায় পাগল বলিস, তুই কি আমার পাগলি হবি?” তো কোথাও লেখা অন্য কিছু। আর এর মাঝেই দেখে নিতে পারেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। তবে হ্যাঁ এই সফর কয়েক ঘণ্টার। এখানে থাকার বন্দোবস্ত নেই। তবে বনভোজন লেগেই থাকে। জীবনের ক্লান্তি এড়াতে ঝাড়গ্রামের গা ছুঁয়ে একটু গেলেই বেশ মজে থাকা যাবে অভিমানী পাথরের বুকে উচ্ছ্বল জলরাশি আর কবিতার মাঝে। কবিতা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের যুগল মনে হয় যে কয়েকটি জায়গা, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে নাম করে নিয়েছে ঘাঘরা। এখানে হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্রের শ্যুটিংও।
শোনা যায়, ব্রিটিশ আমলে ঘোড়ায় করে এখানে চলে এসেছিলেন নীলকর সাহেব ফ্রেডরিক। তারপর থেকে এখানে ইংরেজদের বনভোজন লেগেই থাকত। এখন যদি, তথাকথিত সাজানো বা কংক্রিট শূন্য পর্যটনকেন্দ্র (TOURIST SPOT) দেখতে চান, যদি চান ‘মেকি’র রমরমার মাঝেও সত্যিকারের প্রকৃতি ঘেরা পর্যটনকেন্দ্র দেখতে, তবে আসতেই হবে এখানে। তবে জল- পাথরে বা ফেলবেন সাবধানে। পা পিছলে গেলে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। আসবেন না কি অ্যাডভেঞ্চারে?
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে যে কোনও ট্রেনে করে ঝাড়গ্রাম স্টেশন। সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি করে মাত্র ৫ কিলোমিটার গেলেই ঘাঘরা।