নিজস্ব প্রতিনিধি: বাঙালির অন্যতম জনপ্রিয় খাবার বড়ি। সারাবছর শুক্ত কিংবা মাছের তরকারিতে অথবা শেষ পাতে তেতুলের টকে অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যাবহৃত হয় বড়ি। কিন্তু শীতকালে এই বড়ির কদর যেন আরও কয়েক গুন বেড়ে যায়। নতুন বিউলি ডাল দিয়ে তৈরি মশলা বড়ি বা কুমড়ো বড়ির স্বাদ যেন অমৃত। আর পোস্ত দিয়ে তৈরি পাখির পালকের মত হালকা ভাজা বড়ি তো মুখে দিলেই যেন মিলিয়ে যায়। খেয়ে কিছুতেই যেন মন ভরেনা। তবে স্বাদের ক্ষেত্রে এই সব বড়িকে পিছনে ফেলে দেয় অনন্য নকশা বড়ি বা গয়না বড়ি। শোনা যায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাকি খুব পছন্দের ছিল এই নকশা বড়ি। অন্যদিকে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু জানিয়েছিলেন বাংলার মহিলাদের হাতে তৈরি নকশা বড়ির নকশা গুলি শিল্পের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন। বর্তমান দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এই নকশা বড়ি তৈরি হলেও এই বড়ির জন্য বিখ্যাত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। পরবর্তীকালে পূর্ব মেদিনীপুরের (Purba Medinipur) নকশা বড়ি ভারত সরকারের জিআই ট্যাগ (GI Tag) পেয়েছে। এবারের শীতে আপনাদের জন্য রইল বিখ্যাত এই গয়না বড়ি (Goyna bori)বানানোর সহজ রেসিপি (Easy receipie)।
উপকরণঃ
১। নতুন বিউলির ডাল
২। পোস্ত
৩। কাসার বা স্টিলের থালা
৪। বড় গামলা
৫। সরু ছিদ্র যুক্ত কাপড়ের টুকরো
৬। মোটা কাপড় বা বস্তা
৭। একটা কাঠি
প্রণালীঃ
প্রথমে আগের দিন রাতে বিউলির ডাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরদিন ভোরে ভিজিয়ে রাখা বিউলির ডাল মোটা কাপড় বা বস্তায় ঘষে ডালের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এবার ডাল গুলি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে মিহি করে বেটে নিতে হবে। ডাল শিলনোড়াতে বাটতে পারলেই ভালো হয়। ডাল বাটার সময় কোনও জল দেওয়া চলবেনা। ডাল বাটা হয়ে যাওয়ার পর তা থেকে অল্প অল্প করে একটি বড় গামলায় তুলে নিয়ে ভালো করে ফেটাতে হবে। যত ফেটাতে থাকবে তত ডালবাটা ফুলে উঠতে থাকবে। শেষের দিকে একেবারে ফোমের মত হয়ে উঠবে। এবার একটা বাটিতে জল নিয়ে তাতে অল্প একটু ফেটানো ডালবাটা নিয়ে দিয়ে দিতে হবে। যদি ডালবাটা জলে ভেসে থাকে তাহলে বোঝা যাবে। ডাল ফেটানো হয়ে গিয়েছে। এবার এর সঙ্গে স্বাদ মত নুন দিয়ে আরও কিছুক্ষন ফেটে নিতে হবে। ডাল ফেটানো হয়ে যাওয়ার পর একটা কাসার বা স্টিলের থালায় ঘন করে পোস্ত দিয়ে রোদে দিতে হবে। এবার একটি সরু ছিদ্র যুক্ত কাপড়ের টুকরোর মধ্যে ফেটানো ডাল বাটা পুটলি করে নিয়ে হাতের চাপের সাহায্যে থালায় মিলে দেওয়া পোস্তর উপরে ফুটিয়ে তুলতে হবে পছন্দসই নকশা। একটা নকশা তৈরি হয়ে গেলে বা হাতে কাঠি দিয়ে পুটলি থেকে পড়তে থাকা ডালের লেজ কেটে দিতে হবে। এরপর শুরু করতে হবে নতুন নকশা তৈরী। এরপর বড়ি দেওয়া থালা গুলি দু তিন দিন ধরে রোদে দিয়ে বড়ি শুকনো করতে হবে। বড়ি শুকনো হয়ে গেলে পরে। তা অত্যন্ত সাবধানে তুলে রাখতে হবে। নাহলে অসাবধানতায় একটু ঠোকা লাগলেই বড়ি ভেঙে যাতে পারে। এরপর ইচ্ছে মত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের পাতে তুলে দিন পূর্ব মেদিনীপুরের স্টাইলে বাড়িতেই তৈরী মুচমুচে করে ভাজা নকশা বড়ি।
আরও পড়ুনঃ শিখে নিন জয়নগরের বিশেষ মোয়া তৈরির রেসিপি